বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কখনও আদালতের আদেশে, কখনও প্রশাসনিক চাপের কারণে তার বক্তব্য জনমানসে পৌঁছাতে পারেনি—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের।
তবে, দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান সেই নীরবতার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন,
“আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় আদালতের আদেশে আমার কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গণমাধ্যমের ইচ্ছা থাকলেও তারা সেটা প্রকাশ করতে পারেনি।”
তারেক রহমানের অভিযোগ, প্রেসক্লাবেও তাকে একসময় কথা বলতে দেওয়া হয়নি—
“আমি একবার প্রেসক্লাবে কথা বলেছিলাম। পরে তারা সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়, আইনের দৃষ্টিতে ‘ফেরারি’ কাউকে কথা বলতে দেবে না। এইভাবেই তারা চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে।”
তবু তিনি দাবি করেন, সামাজিক মাধ্যম ও দলীয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি নিয়মিতভাবে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
“আমি থেমে থাকিনি। আমি চেষ্টা করেছি পৌঁছাতে—ইনশাল্লাহ আমি পৌঁছেছি মানুষের কাছে।”
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও দেশে ফেরার ইঙ্গিত
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি “জনগণের মাঝেই” থাকবেন। যদিও দেশে ফেরার নির্দিষ্ট সময় জানাননি, তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন এটি খুব দূরের বিষয় নয়।
“সময় তো চলে এসেছে মনে হয়, ইনশাল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসব।”
বিবিসির প্রশ্নে তিনি বলেন,
“রাজনীতি যখন করি, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বলি—যেখানে জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন থেকে কীভাবে দূরে থাকব? আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে জনগণের সঙ্গে, জনগণের মাঝেই থাকার।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাক্ষাৎকারটি কেবল ব্যক্তিগত মত প্রকাশ নয়—এটি বিএনপির ভবিষ্যৎ রণকৌশলের ইঙ্গিতও বটে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য বিএনপির ঘরে নতুন উৎসাহ জাগাতে পারে।
তারা বলছেন, যদি তিনি নির্বাচনের সময় দেশে ফেরেন, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
পটভূমি
২০০৭ সালে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন অনলাইন সভা, ভিডিও কনফারেন্স ও ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখলেও, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাৎকারে আসেননি—যা এই সাক্ষাৎকারকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।