ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
গতকাল রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা শতাধিক স্বাস্থ্য সহকারী ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে দাবি জানান তাদের ছয় দফা বাস্তবায়নের।
তাদের মূল দাবি—বেতন বৈষম্য নিরসন, নিয়োগবিধি সংশোধন, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ও বিজ্ঞান সংযোজন, ইন সার্ভিস ডিপ্লোমার মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে প্রতিকরণ, টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান ও পদোন্নতিতে ধারাবাহিক গ্রেড উন্নয়ন।
“বৈষম্যের শিকার আমরা, ন্যায্য দাবি মানুন”
অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর ধরে তারা অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও প্রাপ্য মর্যাদা, পদোন্নতি ও বেতন কাঠামো পাননি।
একজন স্বাস্থ্য সহকারী বলেন,
“আমরা জনগণের স্বাস্থ্যসেবার প্রথম সারিতে কাজ করি। কিন্তু আমাদের মূল্যায়ন হয় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করেছি—কিন্তু ন্যায্য প্রাপ্য পাইনি।”
তাদের দাবি, সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা ১ অক্টোবর থেকে ইপিআইসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা
কর্মবিরতির কারণে সদরপুর উপজেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। টিকাদান কর্মসূচি (EPI), প্রাথমিক চিকিৎসা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ কর্মবিরতিতে শিশু টিকাদান ব্যাহত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
একজন অভিভাবক জানান,
“বাচ্চার টিকা দেওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। আমাদের কষ্ট হচ্ছে, তবুও তাদের দাবি যৌক্তিক।”
নেতাদের উপস্থিতি ও ঘোষণা
কর্মবিরতিতে উপস্থিত ছিলেন সদরপুর উপজেলা হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, সহসভাপতি আব্দুল করিম খান, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা, সাংগঠনিক সম্পাদক শেফালী বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সামসুল আহসানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন বলেন,
“আমরা আন্দোলন করতে চাইনি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনছে না। সরকার যদি দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন না করে, তবে আমরা কর্মবিরতি আরও বিস্তৃত করব।”
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি সমাধান প্রয়োজন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবিগুলো অনেকাংশে যুক্তিসংগত। মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা জনগণের সবচেয়ে কাছের সেবা প্রদানকারী, তাদের প্রতি অবহেলা সারাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
সরকার ও সংগঠনের মধ্যে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে মানবিক সমাধান না এলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
উপসংহার
স্বাস্থ্য সহকারীরা কেবল সরকারি কর্মচারী নন—তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে “স্বাস্থ্যসেবার প্রথম আলো”।
তাদের আন্দোলন শুধুই বেতনের নয়, সম্মান ও স্বীকৃতিরও দাবিতে।
একজন প্রবীণ স্বাস্থ্যকর্মী কথায় বললেন—
“মানুষের সেবা করেছি জীবনভর। এখন সরকারের কাছ থেকে শুধু সামান্য ন্যায্যতা চাই।”