• হোম > বিদেশ > জাপানে শ্রমবাজার: বাংলাদেশের সামনে সুবর্ণ সুযোগ

জাপানে শ্রমবাজার: বাংলাদেশের সামনে সুবর্ণ সুযোগ

  • শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৯
  • ৩৫

---

বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের যুবক রাশেদ। বয়স মাত্র ২৪। বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা সে-ই। স্থানীয় এক গার্মেন্টসে কাজ করলেও মাস শেষে সংসার চালানোই কষ্টকর। কিন্তু এখন রাশেদের চোখে নতুন এক স্বপ্ন—জাপান যাওয়া। সেখানে গিয়ে মাসে আয় করা সম্ভব হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড় লাখ টাকা। শুধু ভাষা শিখতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে।

রাশেদের মতো হাজারো তরুণ আজ জাপানের শ্রমবাজারকে ঘিরে নতুন করে আশা দেখছেন। তাদের বিশ্বাস, এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে শুধু নিজেদের পরিবার নয়, দেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে।

কেন জাপান কর্মী চাইছে

জাপানকে এখন বলা হয় “বৃদ্ধদের দেশ”। জন্মহার কমে যাওয়ায় ও দীর্ঘায়ুর কারণে দেশটিতে তরুণ শ্রমশক্তির ভয়াবহ সংকট।

  • ২০২৪ সালে জনসংখ্যা নেমেছে ১২ কোটি ৩ লাখে, যা এক বছরের মধ্যে ৯ লাখ কমেছে।

  • ২০৭০ সালে জনসংখ্যা নেমে আসবে ৮ কোটি ৭০ লাখে।

  • তখন প্রতি ১০ জনে ৪ জনের বয়স হবে ৬৫ বা তার বেশি।

ফলে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, নির্মাণ, প্রযুক্তি, গাড়ি মেরামত থেকে শুরু করে কেয়ারগিভিং—সব ক্ষেত্রেই শ্রমিকের ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় জাপান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

২০১৯ সালে জাপানের সঙ্গে শ্রমচুক্তি সই করার পর থেকে এখনো বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী পাঠাতে পারেনি। অথচ নেপাল ইতোমধ্যেই আড়াই লাখ কর্মী পাঠিয়েছে। বর্তমানে জাপানে মাত্র ২৬ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন,
“বাংলাদেশ থেকে মাত্র তিন মাসের মধ্যে এক লাখ কর্মী জাপানে পাঠানো সম্ভব, যদি তারা জাপানি ভাষা জানেন।”

কিন্তু বাস্তবে প্রধান বাধা হচ্ছে—জাপানি ভাষা না জানা এবং দক্ষ প্রশিক্ষকের ঘাটতি।

কোন খাতে কাজের সুযোগ

জাপান ১৪টি খাতে বিদেশি কর্মী নিচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নার্সিং কেয়ার বা কেয়ারগিভার খাতে (৬০ হাজার কর্মী দরকার)।
এ ছাড়া সুযোগ আছে—

  • নির্মাণ

  • কৃষি

  • ইলেকট্রনিকস ও গাড়ি মেকানিকস

  • জাহাজশিল্প

  • রেস্টুরেন্ট

  • এভিয়েশন

বেতন ও সুবিধা

  • ঘণ্টায় গড়ে ৭০০ টাকা (বাংলাদেশি)

  • মাসে আয় ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা

  • বেতন প্রদান ব্যাংক হিসাবে

  • সুশৃঙ্খল কর্মঘণ্টা ও শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী:

  • ২০২৬ সালে যাবে ২ হাজার

  • ২০২৭ সালে ৬ হাজার

  • ২০২৮ সালে ১২ হাজার

  • ২০২৯ সালে ৩০ হাজার

  • ২০৩০ সালে ৫০ হাজার কর্মী

মোট পাঁচ বছরে ১ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।

ভাষা শেখার পথ

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জাপানি ভাষা শেখার কোর্স চালু হয়েছে।

  • বিএমইটির ৩২টি কেন্দ্র

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি

  • বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন একুশ ও কাওয়াই গ্রুপ জাপান লিমিটেড

শুধু এসএসসি পাস করলেই ভর্তি হওয়া যায়। প্রথম ধাপে এন-ফোর পর্যায়ের ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক।

মানবিক বাস্তবতা

জাপান যেতে চাওয়া প্রতিটি তরুণের গল্প আলাদা, কিন্তু তাদের স্বপ্ন এক। কেউ পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চান, কেউ ছোট ভাইবোনের পড়াশোনা চালাতে চান, কেউ আবার আশা করেন বিদেশে গিয়ে ফিরে এসে দেশে ব্যবসা করবেন।

তাদের চোখে জাপান শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, জীবনের নতুন সূচনা। আর যদি সরকার সময়মতো সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তবে প্রবাসী আয়ের নতুন ইতিহাস গড়তে পারে বাংলাদেশ।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5188 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 09:21:01 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh