• হোম > বিদেশ > ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন যুদ্ধবিমান: হুমকির আঙুল তুললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন যুদ্ধবিমান: হুমকির আঙুল তুললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

  • শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৫
  • ৪৫

---

লাতিন আমেরিকার ভূরাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ভ্লাদিমির পাদ্রিনো অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি যুদ্ধবিমান তাদের উপকূলের কাছে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি একে সরাসরি “সাম্রাজ্যবাদী দুঃসাহস” এবং “আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি” বলে আখ্যা দিয়েছেন।


ভেনেজুয়েলার দাবি

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে জেনারেল পাদ্রিনো বলেন,
“সাম্রাজ্যবাদী এই যুদ্ধবিমানগুলো ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে চলে আসার দুঃসাহস দেখিয়েছে।”

তিনি জানান, বেসরকারি বিমান সংস্থা অ্যাভিয়ানকার মাধ্যমে যুদ্ধবিমানগুলোর তথ্য ভেনেজুয়েলার নিয়ন্ত্রণকক্ষে পৌঁছায়। সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধবিমানগুলো ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৭ মাইল) দূরে অবস্থান করেছিল।


???????? যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা

এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে মন্তব্য চাওয়া হলেও তারা তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে ওয়াশিংটন আগেই ঘোষণা করেছিল যে, তারা ক্যারিবীয় অঞ্চলে বড় আকারের যুদ্ধজাহাজ বহর মোতায়েন করেছে। মার্কিন দাবি, এটি মূলত মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান।


ক্যারিবীয় অঞ্চলে উত্তেজনা

ভেনেজুয়েলার সরকারি বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব (যাকে তারা ‘যুদ্ধমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ করেছে) পিটার হেগসেথের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়—
“তিনি যেন অবিলম্বে তাঁর বেপরোয়া ও যুদ্ধংদেহী মনোভাব থেকে সরে আসেন। এই মনোভাব ক্যারিবীয় অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত করছে।”

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা কয়েকটি নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকজন আরোহী নিহত হন। এই ঘটনাও দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে।


মাদুরোর অভিযোগ ও কূটনৈতিক প্রস্তাব

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে।

তবে একইসঙ্গে তিনি আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন। সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে মাদুরো মার্কিন দূত রিচার্ড গ্রেনেলের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এটি ইঙ্গিত করছে যে, উত্তেজনা বাড়লেও কূটনীতির সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।


ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ক্যারিবীয় অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন প্রভাব বলয়ের অংশ। কিন্তু ভেনেজুয়েলা, কিউবা, নিকারাগুয়া—এসব দেশ ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে।

  • যুক্তরাষ্ট্র একদিকে বলছে মাদক চোরাচালান রোধ করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

  • অন্যদিকে, ভেনেজুয়েলা মনে করে এটি সরাসরি সামরিক চাপ ও শাসন পরিবর্তনের কৌশল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিমান মোতায়েন কিংবা সীমান্তের কাছাকাছি উপস্থিতি শুধুমাত্র শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং এটি ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের একটি বার্তা।


শান্তির ঝুঁকি

ভেনেজুয়েলা সরকারের মতে, এ ধরনের সামরিক আগ্রাসন ক্যারিবীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোও এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।

মানবাধিকারকর্মীরা সতর্ক করে বলছেন, সামরিক মুখোমুখি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ—

  • মৎস্যজীবীরা নিরাপদে সমুদ্রে যেতে পারবে না,

  • বিমান চলাচল ঝুঁকিতে পড়বে,

  • এবং সবচেয়ে বড় বিষয়, একটি মানবিক সংকট আরও গভীর হতে পারে।


উপসংহার

ভেনেজুয়েলা-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব নতুন নয়। তবে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি এটিকে সরাসরি সামরিক উত্তেজনায় পরিণত করছে।

এখন প্রশ্ন হলো—আলোচনার মাধ্যমে কি দুই দেশ শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে যাবে, নাকি ভূরাজনীতির খেলা আবারও লাতিন আমেরিকার সাধারণ মানুষকে নতুন সংকটে ঠেলে দেবে?


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5186 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 12:24:10 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh