• হোম > বাংলাদেশ > “বিদেশি চাপের গল্পে ভয় দেখানো হচ্ছে” — রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল

“বিদেশি চাপের গল্পে ভয় দেখানো হচ্ছে” — রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল

  • শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৩
  • ৩৬

---

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি একটি অস্বস্তিকর শব্দ বারবার শোনা যাচ্ছে—“বিদেশি চাপ”। নানা বক্তব্যে বলা হচ্ছে, বিদেশি শক্তির প্রভাবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু সেই বিদেশি শক্তি কারা? তারা কিভাবে চাপ সৃষ্টি করছে? আর কতটুকু বাস্তব এ আশঙ্কা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল মনে করেন, দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে একটা “স্থায়ী আতঙ্ক” তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তিনি এ নিয়ে খোলামেলা মত প্রকাশ করেন।


আতঙ্কের রাজনীতি

মাসুদ কামাল বলেন,
“আমাদের সরকার জনগণকে জুজুর ভয় দেখাচ্ছে। কখনো বলা হচ্ছে শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসতে পারেন, আবার কখনো বলা হচ্ছে বিদেশিরা চাপ দিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কোন বিদেশি? কী ধরনের চাপ? এর জবাব কেউ দিতে পারছে না।”

তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার—কোনো দেশ থেকেই এমন হুমকির ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তাহলে কোন শক্তিকে কেন্দ্র করে এত ভয় ছড়ানো হচ্ছে?

তার মতে, অজ্ঞাত “বিদেশি চাপ” দেখিয়ে মানুষের মনে অযৌক্তিক ভীতি ছড়ানো হচ্ছে, যা রাজনৈতিকভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার এক কৌশল।


আন্তর্জাতিক সমর্থন নাকি বিভ্রম?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক জাতিসংঘ সফর প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন,
“ড. ইউনূসের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অনেকের ছবি হয়েছে। কিন্তু এরা সবাই অবসরপ্রাপ্ত বিশ্বনেতা, বর্তমান ক্ষমতাসীন কেউ নন। তাহলে এগুলোকে কিভাবে ‘আন্তর্জাতিক সমর্থন’ বলা যায়?”

তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ সফরে জনগণের অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, অথচ প্রকৃত অর্জন নিয়ে কোনো স্বচ্ছতা নেই।
“কত টাকা খরচ হয়েছে, কোন খাতে কত পারডিয়েম দেওয়া হয়েছে—এর জবাব সরকারকে দিতে হবে।”


রাষ্ট্রপতির মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন

রাষ্ট্রপতির চেয়ার সরিয়ে বসার প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন,
“রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে যদি আপনি সম্মান না দেন, তাহলে সেটা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, সমগ্র জাতিকে অপমান করার শামিল। এটা এক ধরনের বিকৃত আনন্দ, যা আমাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

তিনি আরও বলেন, একদিকে রাষ্ট্রপতিকে মানা হচ্ছে না, অন্যদিকে তার দেওয়া নিয়োগ ঠিকই মানা হচ্ছে। এটিই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার দ্বন্দ্ব।


সংবিধান বনাম দ্বৈত আচরণ

মাসুদ কামাল সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যের দিকেও ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, সরকার ঐক্যমতের কথা বলছে, কমিশন গঠনের কথা বলছে, কিন্তু বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই।
“সংবিধান আছে, কিন্তু সেটি পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। আবার বাতিলও করা হয়নি। ফলে দ্বৈত আচরণ দেখা যাচ্ছে। এটা জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে।”


রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাসুদ কামালের বক্তব্য মূলত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরাজমান বিভ্রান্তি ও ভয়কে কেন্দ্র করেই। সরকার যে “বিদেশি চাপ” শব্দবন্ধ ব্যবহার করছে, তা জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এতে জনগণ বাস্তব ইস্যু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অদৃশ্য ভয় দ্বারা পরিচালিত হয়।


উপসংহার

বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই ভয় ও বিভ্রান্তির ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে। এখন আবার “বিদেশি চাপ” ও “ফিরে আসার আতঙ্ক”—এই ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

মাসুদ কামালের মতে, রাজনীতির আসল সমাধান হলো সংবিধান মেনে চলা এবং জনগণের সামনে স্বচ্ছ জবাব দেওয়া।
“আতঙ্ক নয়, জবাবদিহি দরকার। ভয় দেখিয়ে কোনো রাষ্ট্র টেকসই উন্নতির পথে এগোতে পারে না।”


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5184 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 10:51:52 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh