জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে নয় দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে আজ সকালে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সফরের আনুষ্ঠানিকতা ও সম্মেলনে অংশগ্রহণ
২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সফরের শুরু থেকেই জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি।
২৬ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মূল অধিবেশনে ভাষণ দেন, যেখানে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিক সংকট মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’–এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।
২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের চলমান চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বিষয়ে আলোচনা করেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপো গ্রান্ডি এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
কূটনৈতিক সাক্ষাৎ ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক
নয় দিনের সফরে ড. ইউনূস নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান ও কসোভোসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে।
এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
সফরের তাৎপর্য
অধ্যাপক ইউনূসের এ সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কারণ, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিলেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক অবস্থান জোরদারে এ সফর নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
একজন মানবিক নেতা হিসেবে তিনি শুধু বাংলাদেশের স্বার্থ নয়, বরং বৈশ্বিক দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও মানবাধিকার রক্ষার মতো ইস্যুগুলো জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন।
উপসংহার
নয় দিনের এ সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এখন অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণ ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা এবং বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষেরও।