• হোম > রাজনীতি > এনসিপি নেতাকর্মীদের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছনা, সংবাদ সম্মেলন বয়কট

এনসিপি নেতাকর্মীদের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছনা, সংবাদ সম্মেলন বয়কট

  • বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১২
  • ৩৮

---

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাকর্মীদের হাতে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হতে হলো সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের। এই ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন শেষে দেশে ফেরেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সফরসঙ্গীরা। তাদের ফেরাকে কেন্দ্র করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে।

ঘটনাস্থলের বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, বিএনপি নেতা ও সফরসঙ্গী হুমায়ুন কবির সংবাদ ব্রিফিং করছিলেন। এ সময় পাশে অবস্থানরত এনসিপি নেতারা উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক সাংবাদিক তাদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যায়।

সাংবাদিকদের অনুরোধে কর্ণপাত না করে বরং কয়েকজন এনসিপি কর্মী সাংবাদিকদের দিকে ধেয়ে আসেন। মুহূর্তেই ধাক্কাধাক্কি ও বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। কয়েকজন সাংবাদিক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবাদস্বরূপ সম্মেলন বয়কট করে ফিরে যান।

সফরসঙ্গীরা কারা ছিলেন

জাতিসংঘ অধিবেশন ও উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।

নয় দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার সকালে তারা দেশে ফেরেন। তাদের ফেরাকে কেন্দ্র করেই এই বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে।

সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকরা বলেন, “আমরা পেশাদার দায়িত্ব পালনের জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলাম। অথচ রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে আমাদের এমন লাঞ্ছনার শিকার হতে হলো। এটি গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি।”

তারা আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান—গণমাধ্যমকে শত্রু ভেবে আচরণ না করে সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”

মানবিক দৃষ্টিকোণ

সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার—তথ্য জানার অধিকারকে সমুন্নত রাখার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। যারা মাঠে কাজ করেন, তারা প্রতিদিন নানা ঝুঁকি নেন সমাজের সত্য তুলে ধরতে। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনের জায়গায় যদি তারা হামলা বা লাঞ্ছনার শিকার হন, তবে শুধু সাংবাদিকই নয়—পুরো সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একজন সাংবাদিক যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তখন তিনি সঠিকভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন না। আর সংবাদ সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হলে জনগণের জানার অধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়। তাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষা মানে হলো গণমানুষের অধিকার রক্ষা।

করণীয়

এ ঘটনার তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি উঠেছে সাংবাদিক সমাজে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। গণমাধ্যমকে বিরোধী নয়, বরং গণতন্ত্রের সহযাত্রী হিসেবে দেখতে হবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5166 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 02:59:40 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh