বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নতুন করে ২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের মানবিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। এই সহায়তার আওতায় কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায় থাকা পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়া হবে।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানায়, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে এই সহায়তা ঘোষণা করা হয়।
সহায়তার আওতায় যা থাকবে
এই প্যাকেজে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য—
-
খাদ্য
-
বাসস্থান
-
বিশুদ্ধ পানি
-
স্যানিটেশন
-
স্বাস্থ্যসেবা
-
প্রয়োজনীয় পরিষেবা
এছাড়া ১ লাখ ৭৫ হাজার নারী ও কিশোরীর জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। যৌন, শারীরিক ও মানসিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও সহায়তা থাকবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, এই অর্থায়ন সরাসরি মাঠপর্যায়ে জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করবে। তিনি যোগ করেন—
“বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য যুক্তরাজ্যের এই সহায়তা খাদ্য, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি এবং জীবনরক্ষাকারী অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশিদেরও সহায়তা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রাপ্য সুরক্ষা, মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
দীর্ঘমেয়াদি অবদান
২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সংকটে ৪৪৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তা আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টায় অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি অবদান হিসেবে স্বীকৃত। সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের প্রতি লন্ডনের অবিচল সমর্থন ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের অঙ্গীকারকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
সহায়তার বাস্তবায়ন
এই অর্থায়ন পরিচালিত হবে—
-
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)
-
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)
-
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)
-
ইউনিসেফ
-
ইউএনএফপিএ
-
এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিওর মাধ্যমে।
সহায়তার মূল ক্ষেত্রগুলো হবে—
ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সহায়তা, স্যানিটেশন, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, জলবায়ু সহনশীল কৃষি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা।
টেকসই সমাধানের আহ্বান
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ নিরসন না হলে সংকট দীর্ঘায়িত হবে। রাখাইনে এখনো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থাকা মানুষদের জন্য অবাধ মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর সমন্বয় জরুরি।
একইসঙ্গে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব, উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য, জলবায়ু অভিযোজন এবং কমনওয়েলথের মাধ্যমে গভীর সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।