মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অভূতপূর্ব ঘোষণা দিয়েছেন—তার দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিতে হামাসের হাতে মাত্র তিন থেকে চার দিনের সময় আছে। অন্যথায় এর “খুব দুঃখজনক সমাপ্তি” ঘটবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন। এ ঘোষণার পর গাজার মানুষের ভেতর নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রস্তাবের কাঠামো
হোয়াইট হাউস প্রকাশিত ২০ দফা প্রস্তাবে বলা হয়েছে—
-
গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে।
-
হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দিতে হবে।
-
ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
-
হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে এবং গাজার শাসনে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
-
একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
-
গাজায় টেকনোক্র্যাট সরকারের অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন পরিচালিত হবে।
-
সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে তাদের জন্য যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হবেন।
মানবিক বিপর্যয়
গত দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় প্রাণহানি ৬৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে, হাসপাতালগুলোতে ওষুধ নেই, শিশুরা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। মঙ্গলবারও ইসরায়েলি হামলায় আরও কয়েক ডজন মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্তত ২০ জনও ছিলেন।
ডেইর আল-বালাহ শহরে এক শিশুসহ ছয়জন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে বিমান হামলায় চারজন প্রাণ হারান। প্রতিটি মৃত্যুর সাথে যুক্ত হচ্ছে অসংখ্য পরিবারের আর্তনাদ, যারা হয়তো চিরতরে আশ্রয় ও স্বজন হারিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, হামাস প্রস্তাবটি নিয়ে কাজ করছে, তবে এতে আরও ব্যাখ্যা ও আলোচনার প্রয়োজন। ফাতাহ দল প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও তাদের নেতা আব্বাস জাকি একে “আত্মসমর্পণের দলিল” বলে উল্লেখ করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেও জোর দিয়েছেন মানুষের দুর্ভোগ কমানোর ওপর।
মানবিক দৃষ্টিকোণ
গাজার মানুষের চোখে এখন শুধু একটি প্রশ্ন—“আমরা কি বাঁচব?” শিশুদের ক্ষুধা, নারীদের আর্তনাদ, আহতদের দীর্ঘশ্বাস যেন একেকটি যুদ্ধের চেয়ে বড় বাস্তবতা। রাজনৈতিক সমঝোতা, কূটনৈতিক চাপ—এসব হয়তো কাগজে কলমে শক্তিশালী; কিন্তু মানবিক সংকট থামাতে এখনই প্রয়োজন যুদ্ধবিরতি, অবাধ ত্রাণ প্রবাহ, চিকিৎসাসেবা ও নিরাপদ আশ্রয়।
বিশ্ব নেতাদের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ—মানুষকে আগে বাঁচানো নাকি রাজনীতিকে আগে রাখা। গাজার প্রতিটি আহত শিশু, প্রতিটি বিধ্বস্ত পরিবার বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—মানবতার আগে কিছুই নয়।