প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ২২ দিনের বিশেষ অভিযান চালানো হবে। এই সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
সোমবার রাজধানীর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন,
“বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার আলোকে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের মতামত ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার পরামর্শের ভিত্তিতেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।”
অভিযান ও অংশগ্রহণ
উপদেষ্টা জানান, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন এবং অমাবস্যার পরের তিন দিন অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান–২০২৫’ চলবে।
এই অভিযানে অংশ নেবে:
-
মৎস্য কর্মকর্তা
-
নৌ পুলিশ
-
কোস্টগার্ড
-
নৌবাহিনী
-
বিমানবাহিনী
-
অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
ভিজিএফ সহায়তা
৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দেওয়া হবে। পরিবারপ্রতি ২৫ কেজি চাল, যা মোট ১৫ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন।
ফরিদা আখতার জানান, গত বছরের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২.৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পেরেছিল, যা প্রায় ৪৪ হাজার কোটি জাটকা উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ইলিশ আহরণ ও রপ্তানি
উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গত পাঁচ বছরে ইলিশ আহরণ প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে আহরণ আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩ ও ৪৭ শতাংশ কমেছে।
রপ্তানি প্রবণতাও উল্লেখ করে তিনি বলেন,
“এক দশক আগের তুলনায় অনুমোদিত পরিমাণের বিপরীতে প্রকৃত রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে অনুমোদন ছিল ২,৪২০ মেট্রিক টন, কিন্তু রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫৭৪ মেট্রিক টন।”
ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কেজিপ্রতি ১২.৫০ ডলার, যার ফলে সাম্প্রতিক রপ্তানিকৃত ইলিশের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকার বেশি।
নদী ও জলসীমা নিয়ন্ত্রণ
ফরিদা আখতার আরও বলেন, অভিযান চলাকালে নদীতে ড্রেজিং বন্ধ থাকবে এবং জলসীমার বাইরে থেকে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এই বিশেষ অভিযানকে ঘিরে সরকার ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায় একযোগে কাজ করবে, যাতে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন ও প্রজন্ম সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়।