• হোম > বাংলাদেশ > রামু থেকে খাগড়াছড়ি: সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ও রাষ্ট্রের নীরবতা

রামু থেকে খাগড়াছড়ি: সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ও রাষ্ট্রের নীরবতা

  • মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২৩
  • ৩৭

---

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সোমবার অনুষ্ঠিত ‘সহিংসতার কালক্রম: রামু বৌদ্ধমন্দির হামলা থেকে ১৩ বছর এবং গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশের সহিংসতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে সহিংসতা কখনোই স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়।

সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন,

“রামুর ঘটনার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন এটি জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র। এখন খাগড়াছড়ি জ্বলছে, আর বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন এটি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’। এ ধরনের অস্বীকার প্রমাণ করে যে তদন্ত হয় না, কারণ প্রায়শই এতে তাদের নিজেদের স্থানীয় নেতা জড়িত থাকে।”

তিনি আরও যোগ করেন, সহিংসতা আসলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উসকানি এবং ক্ষমতাসীনদের স্বার্থরক্ষার অংশ।


বিচারহীনতার সংস্কৃতি

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রামু হামলার ১৩ বছর পরও বিচার শেষ হয়নি।

“১৯টি মামলা হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগের তদন্তই শেষ হয়নি। স্থানীয়রা ভিডিও প্রমাণ দিয়েছিল, যেখানে দেখা যায় সেনা ও বিজিবির সামনেই হামলাকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, সহিংসতা শুধু সাধারণ মানুষের কাজ নয়, বরং রাজনৈতিক দলের নেতারা সরবরাহ ও সহায়তা দেন।


এক নতুন ধরনের ফ্যাসিজম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিনা লুৎফা বলেন,

“সহিংসতার প্যাটার্ন একই। সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ লুকানো থাকে। মত-বৈচিত্র্যকেই ঘৃণার ভিত্তি বানানো হচ্ছে। এ এক নতুন ধরনের ফ্যাসিজম।”

তিনি সহিংসতা বোঝার জন্য রাজনৈতিক অর্থনীতি ও বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিশ্লেষণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন।


মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংকট

কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন,

“স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও কোনো সরকার গণতান্ত্রিকভাবে দেশ চালায়নি। চলমান সহিংসতা ধর্মীয় ফ্যাসিজমের উদাহরণ। শাসকরা ক্ষমতা রক্ষায় ব্যস্ত, ন্যায্য মজুরি বা সংখ্যালঘু অধিকার নিশ্চিত করেননি।”

তিনি শ্রমিক, কৃষক, সংখ্যালঘু, দলিতসহ বঞ্চিতদের নিয়ে “রেইনবো কোয়ালিশন” গড়ে তোলার আহ্বান জানান।


সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের বিকল্প ভাবনা

গায়ক ও লেখক অরূপ রাহী বলেন,

“রামু থেকে খাগড়াছড়ি—সহিংসতার মূল কারণ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণহীনতা, ডানপন্থি মতাদর্শ, মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা। সমাধান হলো পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি নয়, বরং গভীর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র।”

সভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ সুজিত চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনার সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু।


মানবিক প্রেক্ষাপট

বক্তাদের অভিমত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কোনো রাষ্ট্রই মানবিক রাষ্ট্র হতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও মানুষ তার ধর্ম, জাতিগত পরিচয় বা রাজনৈতিক মতের কারণে ভীত—এ বাস্তবতা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদার জন্য ভয়াবহ হুমকি।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5140 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 10:39:29 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh