বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী অক্টোবর মাসে টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মূল দাবি হিসেবে তারা সামনে এনেছে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আর ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির মাধ্যমে এ আন্দোলনকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়া হবে।
জনগণের দাবির প্রতি সরকারের উদাসীনতা
সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, দেশের জনগণের দাবিগুলো সরকার আমলে নিচ্ছে না। তিনি বলেন—
“আমরা দেখতে পাচ্ছি জনগণের আন্দোলনের কোনো প্রতিফলন ঘটছে না। সরকারের উচিত আমাদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়া। সরকার যদি জনগণের এই ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে, তবে দেশের মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, দলটি শুধু দলীয় স্বার্থ নয় বরং জনগণের রাজনৈতিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিজেদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরছে।
পাঁচ দফা দাবির মূল বিষয়বস্তু
যদিও বিস্তারিতভাবে সব দাবি সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা করা হয়নি, তবে এর মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো—
-
পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচন
-
জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিতকরণ
-
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সবার সমান অংশগ্রহণ
-
জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা
-
একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা
লোগো পরিবর্তনের প্রসঙ্গ
সংবাদ সম্মেলনে দলের লোগো পরিবর্তন প্রসঙ্গও উঠে আসে। এ বিষয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,
“জামায়াতের লোগো পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি কোন লোগো ব্যবহার করা হবে। সংবাদমাধ্যমে যে লোগো প্রদর্শিত হয়েছে, সেটি চূড়ান্ত নয়।”
এ বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায়, রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সাংগঠনিক পরিচিতি নতুনভাবে সাজাতে জামায়াত কাজ করছে।
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্য
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আজ বড় প্রশ্ন—তাদের ভোটাধিকার, মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ আদৌ টিকে থাকবে কি না। জামায়াতের কর্মসূচি এই মানবিক উদ্বেগের প্রতিফলন বহন করে। কারণ জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক কাঠামো টেকসই হতে পারে না।
এই কর্মসূচিগুলো কেবল একটি রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা নয়, বরং তা দেশের মানুষের অধিকার, ন্যায্যতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।