• হোম > বিদেশ > হোয়াইট হাউসের ২০ দফা প্রস্তাব: গাজায় যুদ্ধ অবসান ও পুনর্গঠনের পথনকশা

হোয়াইট হাউসের ২০ দফা প্রস্তাব: গাজায় যুদ্ধ অবসান ও পুনর্গঠনের পথনকশা

  • মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:০১
  • ৪২

---

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত সোমবার হোয়াইট হাউস একটি বিশদ ২০ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেছে, যা মেনে নিলে তৎক্ষণাৎ গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান স্থগিত করা এবং দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে—এমন দাবি বিস্তৃত কাগজে উপস্থাপিত। প্রস্তাবটি জিম্মি ও বন্দী মুক্তি, গাজার প্রশাসন ও নিরাপত্তা, তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন, এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি অনায়াস প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের ওপর জোর দেয়।

প্রস্তাব গ্রহণ হলেও বাস্তবায়নকে ঘিরে অনিশ্চয়তা ও কঠিন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে। নীচে প্রস্তাবের মূল বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ এবং এর মানবিক ও নীতিগত তাৎপর্য তুলে ধরা হলো—

প্রস্তাবের মূল দিকসমূহ (সংক্ষিপ্ত)

  • যুদ্ধ আগেই থেমে যাবে যদি উভয় পক্ষ প্রস্তাবে সম্মত হয়; তৎক্ষণাত বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ বন্ধ থাকবে।

  • জিম্মি ও বন্দী মুক্তির ব্যাপারে ধারাবাহিক বিনিময় ও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত জিম্মিদের (ইস্রায়েলি ও গাজাবাসী) ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা।

  • গাজার সাময়িক প্রশাসন পরিচালনা করবে একটি নিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটি, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে একটি আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিস’—এর নেতৃত্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকার প্রস্তাব।

  • হার্ডলাইন গোষ্ঠীকে প্রশাসনে বা পুনর্গঠনে সরাসরি অংশ না দিতে বলা; হামাস ও অন্যান্য সংগঠনের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস ও নিরস্ত্রীকরণ বাধ্যতামূলক।

  • ব্যাপক মানবিক সহায়তা ও অবকাঠামো পুনর্গঠন তাত্ক্ষণিকভাবে প্রবেশ করবে; পানি, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, বেকারি, রাস্তা ও ধ্বংসস্তূপ অপসারণ কাজ চলবে।

  • একটি আন্তর্জাতিক ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) গঠনের প্রস্তাব—অস্থায়ীভাবে গাজার নিরাপত্তা ও সীমান্ত তত্ত্বাবধান করবে।

  • গাজা দখল বা সংযুক্তি হবে না; ইসরায়েল ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করবে যদি আইএসএফ ও নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত হয়।

  • পুনর্গঠনের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক তহবিলের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উৎসাহ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

  • আঞ্চলিক অংশীদারদের গ্যারান্টি—নির্ধারিত শর্ত মেনে চলা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকবে।

  • ধর্মীয় সংলাপ ও সহনশীলতাভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সহাবস্থান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

মানবিক প্রেক্ষাপট ও তৎপরতা

বহু আন্তর্জাতিক ও এলাকার পর্যবেক্ষক বছরের পর বছর ধরে বলছেন—গাজা এখন একটি তীব্র মানবিক সংকটের মুখে। রিপোর্টে উল্লেখ আছে—যুদ্ধে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং উপত্যকাটি ব্যাপকভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত। এই প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবের মানবিক অজুগুলি জরুরি: জরুরি খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পুনর্বাসন সামগ্রী দ্রুত নিরাপদভাবে পৌঁছে দেওয়া এবং হাসপাতাল ও বেসিক অবকাঠামো পুনরুদ্ধার করা।

তবে বাস্তবায়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ:

  • সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ—হামাস, ইসরায়েল ও আঞ্চলিক অংশীদারদের রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও গ্যারান্টি প্রয়োজন।

  • নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র নিষ্কাশন কার্যক্রমকে কার্যকরভাবে তত্ত্বাবধানে রাখা কষ্টসাধ্য হবে।

  • আইএসএফ ও আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমঝোতা দরকার; অংশীদারি বনাম সার্বভৌম হওয়ার সংঘাত ধরতে পারে।

  • বন্দী ও জিম্মি লেনদেনে বিবিধ আইনি, মানবাধিকারগত ও নিরাপত্তাজনিত জটিলতা রয়েছে।

প্রতিক্রিয়া ও প্রাথমিক বিবেচনা

  • ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনাকে ন্যতিলে মেনে নিয়েছেন বলে বক্তব্য পাওয়া গেছে; তবে বাস্তব পদক্ষেপ ও সমঝোতা কতটা দ্রুত নেওয়া হবে—এটি দেখার বিষয়।

  • হামাসের একটি শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এখনও লিখিত শান্তি পরিকল্পনা হাতে পাননি—এটি প্রস্তাব গ্রহণে সমঝোতার এক বড় বাধা।

  • বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা বলছে—মানবিক দেবার কাজ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বাইরে ত্বরান্বিত করা জরুরি।

হিউম্যানিটারিয়ান ভাবনা ও আহ্বান

যে কোনো প্রস্তাবের কেন্দ্র হওয়া উচিত—নागরিকদের জীবন ও মর্যাদার সুরক্ষা। অস্ত্রবিরতি হলে তৎক্ষণাৎ জরুরি চিকিৎসা, খাদ্য ও বাসস্থান পৌঁছে দিতে হবে। পুনর্গঠন পরিকল্পনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ, মানসিক পুনর্বাসন এবং নতুন সুযোগ সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে—না হলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আসে না।

উপসংহার

হোয়াইট হাউসের ২০ দফা প্রস্তাবটি একটি রাজনৈতিক–নিরাপত্তা ও মানবিক সমাধানের রূপরেখা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়ন গেলে গাজার অচিরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে পুনর্গঠনের দিকে একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিতে পারে। তবে বাস্তবে সফল হওয়া কঠিন—এর জন্য প্রয়োজন প্রাসঙ্গিক সব পক্ষের আন্তরিক সম্মতি, কার্যকর নিরস্ত্রীকরণ, দ্রুত ও স্বচ্ছ মানবিক সহায়তা, এবং আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি ও তহবিল। জনগণের জীবন বাঁচানো ও ভাঙচুর কমানোর দিকটি সব সময়ই সিদ্ধান্ত গ্রহণে অগ্রাধিকার পাবে—এটাই মানবতার অনিবার্য নৈতিক দাবি।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5116 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 11:51:20 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh