ভারতের তামিলনাড়ুর করুর জেলায় ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। জনপ্রিয় অভিনেতা থেকে রাজনীতিতে আসা বিজয় থালাপতির রাজনৈতিক সমাবেশে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারালেন অন্তত ৩১ জন মানুষ। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। হঠাৎ করে ভিড়ের চাপ ও নিয়ন্ত্রণ হারানো মানুষের ঢল মুহূর্তেই আনন্দঘন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানকে পরিণত করেছে শোকে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভয়াবহ পরিণতি
ভোর থেকে হাজারো মানুষ জমায়েত হয়েছিল সমাবেশস্থলে। অধিকাংশই ছিলেন তামিলাগা ভেট্রি কাজাগম (টিভিকে) দলের কর্মী-সমর্থক। নারী, শিশু ও প্রবীণদের চোখে ছিল প্রিয় নেতাকে দেখার স্বপ্ন। প্রায় ছয় ঘণ্টার প্রতীক্ষা শেষে বিজয় আসবেন এই আশায় ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু বিজয়ের আগমন বিলম্বিত হওয়ায় মানুষজন অস্থির হয়ে ওঠে। নিয়ন্ত্রণ হারানো ভিড় মুহূর্তেই হুড়োহুড়িতে রূপ নেয় এবং পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান বহু মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শী মীনা (৩৫), যিনি স্বামীকে হারিয়েছেন, চোখ মুছতে মুছতে বলেন—
“আমরা শুধু বিজয়কে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কখন যে মৃত্যু চলে আসবে, বুঝতেই পারিনি। আমার স্বামীকে আর বাঁচাতে পারলাম না।”
আহতদের হাহাকার
করুর জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ডেভিডসন দেবাশির্বথম জানান—শনিবার রাত পর্যন্ত অন্তত ৫০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্থানীয় হাসপাতালগুলো একসঙ্গে এত আহত রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হাসপাতালের করিডরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। কারও হাত ভেঙে গেছে, কেউ আবার প্রাণের সঙ্গে লড়ছেন। শিশুদের কান্না, নারীদের আর্তচিৎকার—সব মিলিয়ে পুরো হাসপাতাল এলাকা এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।
সরকারি পদক্ষেপ ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এম সুব্রহ্মণ্যন। তিনি আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন—
“করুর থেকে আসা খবর অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে টুইটারে লিখেছেন—
“নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক—এই প্রার্থনা করি।”
বিজয়ের প্রতিক্রিয়া
সমাবেশে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে বিজয় থালাপতি নিজেই বক্তব্য বন্ধ করে দেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মিলে পানির বোতল ছুড়ে দেন ভিড়ের দিকে। তবে এত অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হলেও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পৌঁছতে দেরি হয়।
অজানা ভবিষ্যৎ, অশ্রুভেজা পরিবার
এখনও নিহতদের অনেকের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। কারও মা হারিয়ে গেছে, কারও ভাইয়ের খোঁজ মিলছে না। প্রতিটি পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। করুর জেলায় এখন একটাই দৃশ্য—শোক, কান্না আর নিঃশব্দ আর্তনাদ।
এই দুর্ঘটনা শুধু প্রাণহানি ঘটায়নি, ভেঙে দিয়েছে অসংখ্য পরিবারের স্বপ্ন। রাজনৈতিক সমাবেশ আর আনন্দের মঞ্চ হয়ে উঠেছে মৃত্যুর মিছিল।