প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং প্রয়োজনীয় তহবিল বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “তহবিল সংকটের কারণে আজ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখার প্রচেষ্টা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। অবিলম্বে নতুন তহবিল নিশ্চিত না হলে মাসিক রেশন অর্ধেকে নেমে মাথাপিছু মাত্র ৬ ডলার দাঁড়াবে, যা রোহিঙ্গাদের অনাহার ও মারাত্মক অপুষ্টিতে ফেলবে।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিদ্যমান তহবিলের বাইরে নতুন ও বর্ধিত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে। একইসঙ্গে মিয়ানমার সরকার এবং রাখাইনের অন্যান্য অংশীদারদের ওপর দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে।”
মিয়ানমারে চলমান সংঘাত প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সংঘাত শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনও কঠিন করে তুলছে।
তিনি আরও বলেন, “আট বছর পার হলেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো দৃশ্যমান নয়। উল্টো বাংলাদেশ এখনো নতুন করে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হচ্ছে। সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বৈষম্য ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। যেসব বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ড আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এখনই নেওয়া প্রয়োজন।”
তিনি উল্লেখ করেন, রাখাইনের সমস্যাগুলোর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সমাধান জরুরি। তবে এর জন্য সেখানে সংশ্লিষ্ট সকল জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে এমন একটি সমঝোতা দরকার যাতে রোহিঙ্গারা সমঅধিকার, নাগরিকত্ব এবং মর্যাদাসহ সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলো রোহিঙ্গারা, আর তাদের পরেই বৃহত্তম ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। তবে এটি কেবল বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। বাংলাদেশ কেবল একটি দায়িত্বশীল প্রতিবেশী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছে।”
তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোকেও এই সংকট সমাধানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেকোনো যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা আশা করি এ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প গড়ে তুলবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে। বিশেষ করে তহবিল সংগ্রহ হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। পাশাপাশি একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করে সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।”