• হোম > ক্রিকেট | ফিচার > একজন তরুণকেও এখন জাতীয় দলে চাই না।

একজন তরুণকেও এখন জাতীয় দলে চাই না।

  • শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ১২:০২
  • ৮৭০

ক্রিকেট১৯ বছরের তরুণ দল বিশ্বজয় করেছে৷ এটা নতুন খবর নয়৷ নতুন খবর হলো, সবাই হিসেব করছে এদের কে কখন জাতীয় দলে জায়গা করে নেবেন৷ কিন্তু আমি বলছি, এদের একজনকেও মূল দলে চাই না৷ মানে এখনি চাই না৷

এই বেলায় প্রয়াত ফাহিম মুনয়েম-এর কথা মনে পড়ছে৷ তিনি মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ছিলেন৷ একসময় ছিলেন দি ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক৷ তাঁর অফিসে একটা ছোট্ট ‘ডেস্কপিস’ ছিল৷ সেখানে লেখা ছিল, ‘অ্যাটিটিউড ইজ এভরিথিং৷’ যখনই ওনার সঙ্গে কথা বলতে যেতাম, ওটা আমার চোখে পড়ত৷ তিনি মজার মানুষ ছিলেন৷ প্রায়ই ইংরেজিতে নানান ‘ইডিয়ম’ ব্যবহার করতেন, যেগুলো নিয়ে আমরাও অনেক মজা করতাম৷ যেমন, বলতেন ‘ডোন্ট পুট অ্যাস বিটউইন ইউ অ্যান্ড মি’, ‘অ্যাজ্যুম’ (Assume) কোরো না৷’’ সে যাই হোক, তিনি এই ‘অ্যাটিটিউড’ ব্যাপারটিকে অনেক গুরুত্ব দিতেন এবং আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘‘এটা সবসময় ধরে রাখবে৷’’

অনূর্ধ্ব ১৯ দলটিকে অনেকের মতোই আমার ভালো লেগেছে৷ তাদের দক্ষতা যেমন আছে, আছে বিশ্বসেরা হবার শরীরী ভাষা৷ এটা একটা বড় উন্নতি৷ একটা সময় বড় বড় ক্রিকেটাররা পিঠ চাপড়ে দিলেই খুশি থাকতাম আমরা৷ হয়তো সুনীল গাভাস্কার বলছেন, আজ একটি চমৎকার ‘কাভার ড্রাইভ’ করেছ৷ সেটাই হয়ে উঠত বড় পাওনা৷ এরপর এল ‘সম্মানজনক পরাজয়’-এর যুগ৷ বাংলাদেশ অধিকাংশ ম্যাচ হারছে৷ কিন্তু আমরা খুশি হচ্ছি, বড় ব্যবধানে পরাজিত হইনি৷ হুটহাট এক আধটি জয়েই রং খেলা আর মিছিলের বন্যায় ভাসত রাজপথ৷ এরপর শুরু হলো নিয়মিত ব্যবধানে কিংবা ধারাবাহিক জয়ের পালা৷ বিশ্বকাপ না হোক, এশিয়া কাপ জিততে জিততেও হাতছাড়া হলো৷ বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দল হিসেবে মোটামুটি প্রতিষ্ঠা পেল৷ সবশেষ অনূর্ধ্ব ১৯ দল বিশ্বসেরা হয়ে একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করি আমি৷ কেন নতুন দিগন্ত বলছি সেটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন৷

অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে বড় তারকা

অস্ট্রেলিয়া

মাইকেল ক্লার্ক, ক্যামেরন হোয়াইট, জর্জ বেইলি, স্টিভ স্মিথ, অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার

বাংলাদেশ

রাজিন সালেহ, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাশরাফী, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল

ইংল্যান্ড

মাইক আথারটন, নাসের হুসেইন, অ্যালাস্টেয়ার কুক, গ্রায়েম সোয়ান, ইয়ন মর্গান, জো রুট, জস বাটলার, জেমস টেলর

ভারত

বীরেন্দ্র শেবাগ, সুরেশ রায়না, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা

নিউজিল্যান্ড

লি জার্মন, ক্রিস কেয়ার্নস, ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, রস টেলর, কেন উইলিয়ামসন, কাইল মিলস, টম ল্যাথাম

পাকিস্তান

ইনজামাম, শোয়েব মালিক, আব্দুল রাজ্জাক, সালমান বাট, আজহার আলী, সরফরাজ আহমেদ

শ্রীলঙ্কা

সনাথ জয়সুরিয়া, থিলিনা কান্দাম্বি, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দীনেশ চান্দিমাল, উপুল থারাঙ্গা, থিসারা পেরেরা, লাহিরু থিরিমানে

সাউথ আফ্রিকা

গ্রায়েম স্মিথ, ইয়োহান বোথা, হাশিম আমলা, ডিন এলগার

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

জিমি অ্যাডামস, ব্রায়ান লারা, রামনরেশ সারওয়ান, ক্রিস গেইল, দিনেশ রামদিন, ব্রাভো, ড্যারেন গঙ্গা, রিডলি জ্যাকবস, সিলভেস্টার জোসেফ, ড্যারেন সামি, জেসন হোল্ডার, পোলার্ড, জেসন মোহাম্মদ, মারলন স্যামুয়েলস

জিম্বাবোয়ে

টাটেন্ডা টাইবু, প্রসপার উতসেয়া, ব্র্যান্ডন টেলর, এল্টন চিগুম্বুরা, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, গ্রায়েম ক্রেমার

খুব বিখ্যাত একটা চীনা উক্তি আছে- ‘‘খুব জোরে বাতাস আসলে বেশিরভাগ মানুষ দেয়াল তৈরি করেন৷ কিন্তু কিছু মানুষ তৈরি করেন বাতাসের কল বা ‘উইন্ডমিল’৷” অর্থাৎ কোনো একটা ঘটনা, নতুন বা পুরোনো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘অ্যাপ্রোচ’- মানে কেমন করে তাকে দেখা হচ্ছে৷ সেই দৃষ্টিভঙ্গি সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও বদলায়, কারণ সময় মানুষকে আরো অভিজ্ঞ করে তোলে৷ শুধু পিঠ চাপড়ে দিয়েই যেই বাংলাদেশিদের আগে প্রবোধ দেয়া হতো, আজ তারা বিশ্বসেরা হয়ে উঠতে পারছে৷ এর কারণ, তাদের কঠোর পরিশ্রম, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তারচেয়েও বড় তাদের ‘অ্যাপ্রোচ’৷ যেই ‘অ্যাটিটউড’ নিয়ে এত কথা, তা না থাকলে এরা বিশ্বজয় করতে পারতেন বলে আমি মনে করি না৷ তবে তা খেলার ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখলেই ভালো৷

তবে এও ঠিক যে, শুধু ভাবভঙ্গি দেখালে হবে না, পরিশ্রম ও নিষ্ঠা চাই৷ কিন্তু আমি বলছি মাঠের ভেতরে আগ্রাসী না হলে যুদ্ধ জয় করা যায় না৷ প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়াও যুদ্ধকৌশলের অংশ৷ শরীফুল-রাকিবুলদের মধ্যে সেই শরীরী ভাষা ছিল এবং তা তারা কাজেও লাগাতে পেরেছেন৷ তাই এই যে ‘ভাষাশিক্ষা’, এই যে ‘অ্যাটিটিউড’, এটা নিজেদের সেরা ভাবতে শেখার অংশ৷ একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বিশ্বসেরার লড়াইয়ের ময়দান পর্যন্ত যারা পৌঁছান তাদের সবারই সেরা হবার যোগ্যতা আছে৷ সেই যোগ্যতার ওপর আস্থা কে কতটা রাখতে পারছে এবং খেলার মাঠে প্রতিপক্ষকে দেখে ভড়কে যাচ্ছে না, সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই জয় আসে৷ আগের দিনে বড় বড় অস্ত্র নিয়ে যখন যুদ্ধের ময়দানে যেত, তখন প্রতিপক্ষের সৈন্য সামন্তরা সেই অস্ত্রের বিশালত্ব দেখে ভয় পেত৷ ক্রিকেটে সেই বড় অস্ত্রগুলোর নাম শচীন, লারা, গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, কোহলি, স্মিথ, উইলিয়ামসন -এরা৷ কিন্তু ২২ গজের উইকেটে এদের নিয়মিত চোখ রাঙিয়ে দিতে পারাটা অভ্যাসে পরিণত করা গেলে জয়টাও অভ্যাসে পরিণত হতে পারে৷


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/501 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 05:25:44 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh