মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বহনকারী মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টার যখন হোয়াইট হাউস থেকে আকাশে উড়ছিল, তখন সেটির দিকে লেজার রশ্মি তাক করায় জ্যাকব স্যামুয়েল উইঙ্কলার নামে ৩৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি শুধু একটি আইন ভঙ্গ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও মানুষের জীবনের জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঝুঁকির মাত্রা
আদালতে জমা দেওয়া নথিতে বলা হয়, লেজার রশ্মিটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে মুহূর্তের জন্য ‘ফ্ল্যাশ ব্লাইন্ডনেস’ ও বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারত। বিশেষ করে নিচু উচ্চতায় উড়ন্ত অবস্থায় এটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারত। ওয়াশিংটন মনুমেন্টের কাছে আকাশপথে সংঘর্ষের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছিল।
মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, লেজার বিমানের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। এটি পাইলটকে অন্ধ করে দিতে পারে বা সাময়িকভাবে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দিতে পারে। শুধু চলতি বছরেই দেশটিতে ৫,৯১৩টি লেজার-সংক্রান্ত ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি
ঘটনার পরপরই গোপন সার্ভিসের এক কর্মকর্তা উইঙ্কলারকে আটক করেন। হাতকড়া পরানোর সময় তিনি হাঁটু গেড়ে বলেন—
“আমার ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
পরে তদন্তকারীদের তিনি জানান, তিনি জানতেন না যে হেলিকপ্টারের দিকে লেজার তাক করা নিষিদ্ধ। তার ভাষায়—
“আমি স্টপ সাইনসহ নানা কিছুর দিকে লেজার তাক করি, এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না।”
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষ জানুক বা না জানুক, লেজার বিমানের ওপর তাক করা একটি অপরাধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যা শত শত যাত্রী বা রাষ্ট্রনেতার জীবনের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
আইনগত পরিণতি
উইঙ্কলারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল যে প্রযুক্তির অপব্যবহার কেবল আইন ভঙ্গ নয়, বরং মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে।
মানবিক বাস্তবতা
একটি ছোট ডিভাইস—যেমন একটি লেজার পয়েন্টার—সারা জাতির নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে। হেলিকপ্টারের ভেতরে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পাইলট ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জীবন এক মুহূর্তে ঝুঁকিতে পড়েছিল।
ঘটনাটি শুধু আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, বরং আমাদের প্রত্যেককে ভাবতে শেখায় যে, দায়িত্বজ্ঞানহীন এক মুহূর্তের কাজ কত বড় মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।