বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ব্যস্ততম কূটনৈতিক দিন কাটালেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছেই তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।
নিউইয়র্কে আগমন
বিকেল ৩টায় (নিউইয়র্ক সময়) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যান এবং নির্ধারিত বৈঠকগুলোতে অংশ নেন।
রাণীর সঙ্গে বৈঠক
সোমবার জাতিসংঘের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে বেলজিয়ামের রাণী ম্যাথিল্ডের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের দেখা হয়। এই বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন, শিশু ও নারী উন্নয়ন, শিক্ষা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো মানবিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। রাণী ম্যাথিল্ড দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে সক্রিয়। তাই তার সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের এ সাক্ষাৎ বাংলাদেশের সামাজিক অগ্রগতির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
???????? গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে আলোচনা
একই অনুষ্ঠানে বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনও অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নকে কেন্দ্র করে দুই নেতার মধ্যে বিস্তৃত মতবিনিময় হয়। বৈঠকে বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ ও বাংলাদেশে তরুণদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আলোচিত হয়।
আইএমএফ প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা, এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যেও কীভাবে বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে, সেটিই আলোচনার মূল বিষয় ছিল।
মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই বৈঠকগুলো কেবল কূটনৈতিক সৌজন্য নয়—এগুলো প্রতীকীভাবে বাংলাদেশের মানবিক মূল্যবোধ ও উন্নয়ন অভিযাত্রার প্রতিফলন।
-
বেলজিয়ামের রাণীর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে মানবিক উন্নয়ন।
-
গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে বৈঠক করেছে শিক্ষা ও তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।
-
আর আইএমএফ প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও টেকসই উন্নয়ন।
এই বৈঠকগুলো প্রমাণ করে, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর এখন মানবিকতা, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের আলোচনায় কেন্দ্রীভূত।
উপসংহার
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের শুরুতেই এমন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। অধ্যাপক ইউনূস দেখিয়েছেন—বাংলাদেশ কেবল আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে নয়, বরং বৈশ্বিক পরিসরেও মানবিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের পক্ষে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।