গাজী আয়ান, বয়স এগারো, দিনে মাত্র এক থেকে দুই ঘণ্টা পড়াশোনা করে, বাকি সময় মোবাইলে ব্যয় করে। তার মা তামান্নারা তানিয়া বলেন, ছেলের পড়াশোনায় মনোযোগ নেই, মোবাইল ছাড়া সে এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খেলাধুলাও হয় না। তিনি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
ঢাকার লালমাটিয়ার রোকসানা আখতারও অভিযোগ করেন, তার ১২ বছর বয়সী ছেলে রায়হান কোচিংয়ে না গেলে সারাদিন মোবাইল ছাড়া থাকে না, পড়াশোনা ও ঘুমও অনিয়মিত। মোবাইল রাখতে বললেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে।
রাজধানীর শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই চিত্র খুবই সাধারণ। ঘরের কম খোলা জায়গা ও খেলার সুযোগ না থাকায় তারা ল্যাপটপ, ট্যাব ও মোবাইলের আসক্তিতে বন্দি। গবেষকরা বলেন, শিশুরা প্রাথমিকভাবে বাবা-মার ডিভাইস ব্যবহার দেখে আসক্তি পায়, পরে কার্টুন, ইউটিউব ও অনলাইন গেমে আগ্রহ বাড়ে।
মার্কিন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. নিকোলাস কারদারাস বলেন, এটি ‘ডিজিটাল মাদক’। ভারতে গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার চোখের রেটিনা, কর্নিয়া ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশে ৪-১৭ বছর বয়সী প্রায় ৬০ লাখ শিশু-কিশোর ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত। এর ফলে অনিদ্রা, আগ্রাসী মনোভাব, আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুকে দিনে অন্তত দুই ঘণ্টা বাইরের পরিবেশে খেলাধুলায় যুক্ত করলে আসক্তি কমে। ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার ৪০-৪৫ মিনিটের বেশি না হওয়াই উত্তম। শিশুদের ডিভাইস থেকে দূরে রাখা এবং খোলামেলা পরিবেশে সময় কাটানো জরুরি, যাতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়।
ডা. কাজী সাব্বির আনোয়ার ও ডা. নেহাল করিম উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত ব্যবহার চোখ ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। অধ্যাপক ডা. এ.বি.এম. আবদুল্লাহ বলেন, শিশুদের ডিভাইস থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন, না হলে স্থূলতা, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মৌলিক নির্দেশনা: শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সময় সীমিত করতে হবে, খেলার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে এবং পড়াশোনা ও সৃজনশীল কাজে মনোযোগী হতে উৎসাহিত করতে হবে।