রাজধানী ঢাকা আজ আবারও জলাবদ্ধতায় ডুবল। গত ১২ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের নিত্যযাত্রা পরিণত হয় দুর্ভোগের দুঃস্বপ্নে।
জলাবদ্ধ নগরী
সোমবার সকাল থেকেই রায়সাহেব বাজার মোড়, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, গ্রিনরোড, নিউমার্কেট, আসাদগেট ও জিগাতলা—সব জায়গায় একই চিত্র। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর সমান। সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে বহু জায়গায়।
বংশালের নাজিরাবাজার এলাকায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে আমিন (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। তার সঙ্গে থাকা পথচারী জিসান বলেন—
“সাইকেল চালাতে চালাতে হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে যান আমিন। আমরা বাঁশ দিয়ে তাকে কাছে এনে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু তখন আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।”
দুর্ভোগের চিত্র
কর্মজীবী মানুষদের ভোগান্তির শেষ নেই। কেয়া সরকার, একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বলেন—
“প্রতিদিন অফিসে যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। আজ লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি। কাকরাইল থেকে মৌচাক পর্যন্ত মনে হচ্ছিল আমি নদীর উপর দিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি জানান, পানিতে ভ্যানগাড়ি উল্টে গিয়ে নতুন করে যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তুলি নিজের অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন—
“ঘুম থেকে উঠে দেখি দ্বীপের মধ্যে ভাসছি। ক্লাসে পৌঁছাতে সাঁতরে চেষ্টা করলাম, পারলাম না। শেষে রিকশাওয়ালাদের কাছে মিনতি করতে হলো। একজন রাজি হলেও ভাড়া চাইলো ৮৫০ টাকা।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির মাত্রা বেশি। তবে আগামীকাল নাগাদ বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান।
মানবিক সংকট
বৃষ্টির কারণে নগরীর মানুষ শুধু ভোগান্তিই নয়, জীবনহানির শিকার হচ্ছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্য এই জলাবদ্ধতা প্রতিদিনের যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অচল সড়ক, যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া, বিদ্যুতায়নের ঝুঁকি—সব মিলিয়ে রাজধানীর জীবন আজ আরও দুর্বিষহ।
শহরের সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন—“কবে মুক্তি মিলবে এই জলাবদ্ধতার দুঃস্বপ্ন থেকে?”