বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে। এ উপলক্ষে সারাদেশেই চলছে পূজার প্রস্তুতি। নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা আয়োজনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার।
আজ সোমবার নারায়ণগঞ্জে রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের সামনে আশ্বাস দেন— “অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের দুর্গাপূজা হবে আরো শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও উৎসবমুখর।”
নিরাপত্তায় নজিরবিহীন ব্যবস্থা
উপদেষ্টা জানান, সারাদেশে প্রায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপে এবার দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মণ্ডপেই থাকবে সিসি ক্যামেরা, আনসার, পুলিশ, র্যাব এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারি। শুধু তাই নয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৮০ হাজার ভলেন্টিয়ার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন। প্রতিটি মণ্ডপে অন্তত সাতজন করে পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যের পাশাপাশি আটজন আনসার সদস্যও দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের পূজা আয়োজনে সহায়তার জন্য ৩২ লাখ টাকা এবং প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি চাল প্রদান করা হয়েছে।
জনগণের অংশগ্রহণে উৎসবের আবহ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সার্বজনীন আনন্দের একটি আয়োজনে রূপ নেয় দুর্গাপূজা। সবার অংশগ্রহণ, সহমর্মিতা এবং সহযোগিতার মধ্য দিয়েই পূজার সফলতা আসে।”
এবার পূজামণ্ডপের আশেপাশে বড় ধরনের মেলা বসতে দেয়া হবে না। তবে স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রাখতে সীমিত পরিসরে কিছু দোকানপাট বসার অনুমতি থাকবে।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশে পূজা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। এ উৎসব ঘিরে হিন্দু-মুসলিমসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে যেন কোথাও কোনো প্রকার অঘটন না ঘটে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দৃঢ় কণ্ঠে জানান— “বাংলাদেশে ধর্মীয় সহাবস্থান একটি ঐতিহ্য। এবারের পূজাও সেই ঐতিহ্যের গৌরব বৃদ্ধি করবে।”
মানবিক প্রেক্ষাপট
প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক প্রয়োজনেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। খাদ্য সহায়তা, ভলেন্টিয়ারদের উপস্থিতি এবং প্রযুক্তি-নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যেন কোনো ভয়ের ছায়া ছাড়াই পূজা পালন করতে পারেন, সেটিই হচ্ছে সরকারের মূল লক্ষ্য।
এবার দুর্গোৎসব হয়ে উঠতে চলেছে এক মানবিক ও সামাজিক মিলনমেলা—যেখানে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে যাবে গ্রাম থেকে শহরে, মণ্ডপ থেকে মানুষের হৃদয়ে।