• হোম > বাংলাদেশ > জাতিসংঘে ইউনূসের মানবতার বার্তা

জাতিসংঘে ইউনূসের মানবতার বার্তা

  • রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৪
  • ৫২

---

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ রাতে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন তিনি, আর ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই সফর কেবল কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়—বাংলাদেশের জন্য এটি মানবিক দায়িত্ব ও বৈশ্বিক ন্যায়ের পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

মানবতার আলোকে বাংলাদেশের অঙ্গীকার

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে মূলত উঠে আসবে মানবতা, ন্যায়বিচার ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি। তিনি তুলে ধরবেন অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক বছরের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা, এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার। তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের বার্তা।

রোহিঙ্গা সংকট: মানবতার চ্যালেঞ্জ

এই সফরে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে “হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার।” অধ্যাপক ইউনূস গত বছর এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো সর্বসম্মতিক্রমে তা গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গার দুর্দশা শুধু জাতীয় বোঝা নয়, এটি মানবতার সংকট। কক্সবাজারে গত মাসে আয়োজিত অংশীদার সভায় যেমন প্রত্যাশা জাগানো হয়েছিল, নিউইয়র্কের এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে যেন একটি কার্যকর সমাধান রূপরেখা তৈরি হয়, সেই আশায় রয়েছে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

বৈশ্বিক সংকট ও শান্তির বার্তা

অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ভাষণে শুধু বাংলাদেশের সংকট নয়, বিশ্ববাসীর জন্য প্রাসঙ্গিক নানা ইস্যুও তুলে ধরবেন। এর মধ্যে রয়েছে—

  • শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকা ও অবদান

  • জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবি

  • টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

  • অবৈধ অর্থপাচার রোধ

  • নিরাপদ অভিবাসন ও অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষা

  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে টেকসই প্রযুক্তি হস্তান্তর

  • ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা

এই বৈশ্বিক মানবিক প্রশ্নগুলোতে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা কেবল আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের অবস্থানকে দৃঢ় করবে না, বরং দুর্বল ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবিক দায়বদ্ধতাকেও বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরবে।

উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব

সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। তিনি বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন, যেখানে শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের ইস্যু বিশেষভাবে আলোচিত হবে।

অন্যদিকে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বহুপাক্ষিক নানা বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এর মধ্যে রয়েছে কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, পিসবিল্ডিং কমিশনের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক, জি-৭৭ ও চীন বৈঠক, ওআইসি বার্ষিক সমন্বয় সভা, বিমসটেক, সিকা এবং এলডিসি মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক। প্রতিটি সভায় মানবিক দায়বদ্ধতা ও সহযোগিতা হবে বাংলাদেশের মূল বার্তা।

বহুদলীয় প্রতিনিধিত্ব ও মানবিক কূটনীতি

এ সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাকছেন দেশের চার রাজনৈতিক নেতা—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও মানবিক ইস্যুতে তাঁদের একসঙ্গে বৈশ্বিক ফোরামে উপস্থিত হওয়া বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।

শান্তি, ন্যায় ও মানবিকতার বার্তা

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কেবল কূটনীতির মঞ্চ নয়, এটি মানবতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জায়গা। অধ্যাপক ইউনূস এই সফরে বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন, বাংলাদেশ কেবল নিজের জন্য নয়—বরং নিপীড়িত, বঞ্চিত ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্যও লড়াই করছে।
বাংলাদেশের মানবিক কূটনীতির এই অধ্যায় দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুনভাবে তুলে ধরবে, যেখানে শান্তি ও মানবতার বার্তাই হবে মূল ভিত্তি।

অধ্যাপক ইউনূস ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4893 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 11:00:47 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh