দক্ষিণ ভারতের কেরালার সবচেয়ে বড় উৎসব ওনামের আগেই এক মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারালেন ৪৫ বছর বয়সী শোভনা নামের এক দলিত নারী। উৎসবের রঙিন মুহূর্তে তাঁর পরিবার শোকে ডুবে যায়, যখন একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ভেতর কাঁপতে কাঁপতে তিনি জ্ঞান হারান এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মালাপ্পুরাম জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করতেন শোভনা। ফলের রস বোতলজাত করে সংসার চালাতেন তিনি। কয়েক দিন ধরেই মাথা ঘোরা ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন। স্থানীয় চিকিৎসকরা কিছু ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। শরীর জ্বর, ভয়ানক কাঁপুনি আর অস্বস্তিতে ভরে ওঠে। অবশেষে ৫ সেপ্টেম্বর, ওনামের প্রধান দিনে, তিনি মারা যান।
বিরল ও প্রাণঘাতী রোগ
শোভনার মৃত্যুর কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয় ন্যাগ্লেরিয়া ফাওলেরি, যাকে সাধারণভাবে মগজখেকো অ্যামিবা বলা হয়।
-
এটি একটি প্রাণঘাতী পরজীবী, যা সাধারণত মিষ্টি পানিতে পাওয়া যায়।
-
নাকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটায়।
-
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এতটাই বিরল যে অনেক ডাক্তার তাঁদের পুরো ক্যারিয়ারে এই রোগের রোগী দেখেন না।
শোভনার এক আত্মীয়া ও সমাজকর্মী অজিথা বলেন,
“এই রোগ আটকানোর জন্য আমাদের কিছুই করার ছিল না। শোভনার মৃত্যুর পরেই আমরা প্রথমবার এর নাম শুনলাম।”
অজানা আতঙ্কে গ্রাম
শোভনার আকস্মিক মৃত্যু তাঁর পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। একই সঙ্গে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উৎসবের আনন্দ ছাপিয়ে শোক আর অজানা ভয়ের ছায়া নেমে এসেছে মালাপ্পুরামের গ্রামীণ জীবনে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ন্যাগ্লেরিয়া ফাওলেরি সাধারণত পুকুর, হ্রদ বা অনিরাপদ জলের সংস্পর্শে এলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তবে এর প্রতিরোধে কার্যকরী ভ্যাকসিন বা সহজ চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
উপসংহার
শোভনার মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। ওনামের আনন্দ যেখানে মিলনমেলায় রূপ নেয়ার কথা, সেখানে এক অচেনা রোগ ছিনিয়ে নিল জীবনের হাসি। দক্ষিণ ভারতের এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিল—অপরিচিত সংক্রমণও কেবল একজন মানুষের জীবন নয়, একটি সমাজের উৎসব, ঐতিহ্য আর ভবিষ্যৎকে থামিয়ে দিতে পারে।