আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা ও নারীর অধিকার ক্রমশই আরও কঠোর সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে তালেবান সরকার বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা সব বই সরিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, নারীবিষয়ক পাঠক্রম ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়নও এখন বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের কালো তালিকায় থাকা ৬৭৯টি বইয়ের মধ্যে অন্তত ১৪০টি নারীদের লেখা। এমনকি ল্যাবরেটরিতে নিরাপত্তা বিষয়ক বইও নিষিদ্ধ তালিকায় পড়েছে।
নিষিদ্ধ করা হলো ১৮টি পাঠ্যবিষয়
তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শরিয়া ও শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় অন্তত ১৮টি পাঠ্যবিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো যাবে না। নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
Gender and Development
-
The Role of Women in Communication
-
Women’s Sociology
নারী শিক্ষা ধাপে ধাপে বন্ধ
২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করছে তালেবান। এখন ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ নেই।
-
২০২৪ সালের শেষদিকে নীরবে ধাত্রীবিদ্যা কোর্স বন্ধ করা হয়।
-
এবার সরাসরি নিশানা হলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারীদের লেখা বই ও নারীবিষয়ক পাঠক্রম।
একজন বই পর্যালোচনাকারী কমিটির সদস্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানো যাবে না।
ইরানি বইও নিষিদ্ধ
শুধু নারী লেখক নন, ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আফগান সংস্কৃতিতে ইরানি প্রভাব ঠেকাতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মোট ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১০টি বইয়ের লেখক ইরানি কিংবা বইগুলো ইরানে প্রকাশিত। আফগান অধ্যাপকেরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে।
এক অধ্যাপক বলেন,
“ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক একাডেমিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযুক্ত রেখেছিল। এগুলো বাদ দিয়ে পাঠ্যবইয়ের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে না।”
নারীবিদ্বেষী নীতির ধারাবাহিকতা
দেশটির নারী অধিকারকর্মী ও সাবেক উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি বলেন,
“এটা তালেবানের ধারাবাহিক নারীবিদ্বেষী নীতিরই অংশ।”
তিনি জানান, তাঁর নিজের লেখা বইও নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
উপসংহার
তালেবানের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত কেবল নারীদেরই নয়, বরং গোটা আফগান উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকেই সংকটে ফেলছে। নারীদের কণ্ঠ, গবেষণা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞানের পরিধি সীমিত হয়ে পড়বে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি আরও গভীর অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।