• হোম > অর্থনীতি > ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত : ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ

ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত : ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ

  • শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১১
  • ৬৮

---

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একের পর এক ধাক্কা, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের অসংখ্য উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, কর্মসংস্থান হারিয়েছেন লাখো শ্রমিক। এই প্রেক্ষাপটে অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের নতুন সুযোগ দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সিদ্ধান্তটি এক বছর আগে নিলে অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি হতো না। শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসার সুযোগ পেলে উৎপাদন চলমান থাকত, শ্রমিকদের চাকরি বাঁচত, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ত এবং সাধারণ মানুষও উপকৃত হতো।


ব্যাংকগুলোর ওপর ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষমতা

বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত কমিটি ১,২৫০টির বেশি আবেদন গ্রহণ করলেও প্রায় ৩০০ আবেদন নিষ্পত্তি করে বাকিগুলো ঝুলিয়ে রেখেছিল মাসের পর মাস। অবশেষে ব্যাংকগুলোকে শর্তসাপেক্ষে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান এ বিষয়ে বলেন,

“ঋণ পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোকেই নিতে দেওয়া উচিত। কারণ গ্রাহকের প্রকৃত অবস্থা ব্যাংকই ভালো বোঝে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দেবে, কিন্তু ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেবে—এটা হতে পারে না।”


ব্যবসায়ীদের স্বস্তি, কিন্তু শর্ত কঠিন

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,

“বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অনেক ব্যবসায়ীকে ঋণ খেলাপির তকমা থেকে মুক্তি দেবে। তবে পরিশোধের সময়সীমা ১০ বছরের বদলে ১৫ বছর করলে ব্যবসায়ীরা আরও স্বস্তি পেতেন।”

তবে এখনো কিছু শর্ত ব্যবসায়ীদের চিন্তায় ফেলেছে। যেমন—পরপর তিন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুনরায় ঋণ খেলাপির তালিকায় চলে যাওয়ার বিধান।


অর্থনীতির মানবিক দিক

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ক্ষতি সমন্বয় ও এককালীন এক্সিট সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু গত এক বছরের বাস্তব চিত্র ভয়াবহ।

  • শুধু গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে।

  • এতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন।

  • বেশির ভাগ বন্ধ কারখানা তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল ও নিটওয়্যার খাতের।

এভাবে শিল্প বন্ধ হওয়া মানে শুধু মালিকের ক্ষতি নয়, হাজারো পরিবারে অনাহার, হতাশা ও বেকারত্বের অভিশাপ।


বিশ্লেষকদের মত

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন,

“দেশের অনেক ভালো ব্যবসায়ী এখন ভুগছেন। অনেকেই ঋণ খেলাপি হয়ে গেছেন, কেউ কারাগারে আছেন, কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ তাঁরা জিডিপি ও কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন। এই সুবিধা তাঁদের ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে।”


উপসংহার

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই সিদ্ধান্ত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য আশার আলো। তবে শর্তগুলো আরও শিথিল হলে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পোদ্যোক্তারা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই সুযোগ কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন যথাযথ বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4837 ,   Print Date & Time: Tuesday, 25 November 2025, 07:17:17 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh