বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে নাহিদের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
সেদিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম
আদালতের শুরুতেই দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অবশিষ্ট জেরা সম্পন্ন করা হয়। এর আগে গত ১০ জুলাই মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন।
তিনি আদালতে বলেন,
“জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। আমি দোষী। আমি রাজসাক্ষী হয়ে এই সময়কার ঘটনা আদালতের সামনে তুলে ধরতে চাই এবং রহস্য উন্মোচনে সহায়তা করতে চাই।”
অভিযোগ গঠনের সময়ই মামুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই বক্তব্য দেন।
অভিযোগের বিবরণ
একই দিনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে এ আদেশ দেওয়া হয়।
প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৭। এর মধ্যে—
-
তথ্যসূত্র: ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা
-
জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ: ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা
-
শহীদদের তালিকার বিবরণ: ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা
এই মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
প্রেক্ষাপট
জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার দমন-পীড়নের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম নেয়। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে এ ঘটনাকে চিহ্নিত করে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়ায় আনা হয়।
ট্রাইব্যুনালের পরবর্তী কার্যক্রমে মূল সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে এ মামলার দিকনির্দেশনা আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।