• হোম > বাণিজ্য > বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আগুন: সবজি-মাছ-মুরগি-চালে ভোগান্তি

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আগুন: সবজি-মাছ-মুরগি-চালে ভোগান্তি

  • শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৮
  • ৪০

---

রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দামের লাগামহীন উর্ধ্বগতি কোনোভাবেই থামছে না। শুক্রবার রাজধানীর শ্যামবাজার, খিলগাঁও, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে—সবজি থেকে শুরু করে চাল, মাছ, মুরগি—সবকিছুর দামই প্রায় আকাশছোঁয়া। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে।

সবজির বাজারে আগুন

প্রতিদিনের রান্নার মূল উপাদান সবজির বাজারে আগুন লেগেছে। নতুন গোলাকৃতির বেগুন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা ও কচুর লতির দাম বাজারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। ধুন্দল কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙ্গা, পটল ও ঢ্যাঁড়সও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে।

একজন গৃহিণী অভিযোগ করে বলেন,

“আমরা সাধারণ মানুষ সবজি কিনতে বাজারে যাই, কিন্তু হাতের টাকায় কিছুই মেলে না। পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজিই ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না।”

পেঁপে অবশ্য কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। প্রতিটি লাউ কিনতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। শাকের বাজারেও দাম বেশি। লাল শাক, কলমি বা হেলেঞ্চা শাকের আঁটি ২০ টাকা, তবে পুঁইশাকের আঁটি ৪০-৫০ টাকা।

চালের বাজারে স্বস্তি নেই

নিত্যপ্রয়োজনীয় চালের দামও চড়া। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রি-২৮ চাল পাওয়া যাচ্ছে ৬২ টাকায়, আর মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল কেজিপ্রতি ৫৮-৬০ টাকা।

একজন দোকানদার বলেন,

“চালের পাইকারি বাজারেই দাম বাড়ছে। আমরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করি, না হলে তো ক্ষতি গুনতে হবে।”

মুরগি ও ডিমের বাজার

গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বেড়ে ১৮০-২০০ টাকা হয়েছে। তবে কিছুটা স্বস্তি এসেছে ডিমের বাজারে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

মাছের বাজারে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ

বাংলাদেশিদের প্রিয় মাছ ইলিশের দাম এবার ভোক্তাদের চরম কষ্ট দিচ্ছে। মৌসুমে প্রচুর সরবরাহ থাকার পরও বাজারে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী দামে।

  • এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৫০০ টাকা।

  • ৫০০-৭০০ গ্রাম ইলিশ ১৫০০ টাকা,

  • এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকা,

  • আর বড় ইলিশ (২-২.৫ কেজি) ৩০০০-৩৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কেবল ইলিশই নয়, অন্যান্য মাছেও চড়া দাম। কোরাল ৮০০-৯০০ টাকা, আইড় ৬০০-৭৫০ টাকা, আর চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চিংড়ির দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।

খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০-৪৫০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, পাবদা আকারভেদে ৪০০-৬০০ টাকা। ছোট মাছ পুঁটি ২০০-২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০-৪৫০ টাকা। চাষের মাছ তেলাপিয়া ২৫০-৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০-২৮০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ টাকা। পাঙাস ও সিলভার কার্পও মিলছে ২৫০-২৮০ টাকা কেজি দরে।

ক্রেতাদের হতাশা

বাজারে আসা এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বলেন,

“মাসিক বেতন থেকে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। মাছ, মাংস তো দূরের কথা—এখন সাধারণ সবজিই হাতের নাগালে নেই।”

একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

“দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে বলে সরকার দাবি করলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ আজ দিশেহারা।”

সার্বিক চিত্র

সবজির বাজার থেকে শুরু করে চাল, মুরগি, মাছ—সব ক্ষেত্রেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। সামান্য পেঁপে বা ডিম ছাড়া কোনো পণ্যের দামই কমেনি। ভোক্তারা মনে করছেন, কার্যকর বাজার মনিটরিং এবং জবাবদিহিতার অভাবেই এমন অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4665 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 01:09:37 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh