নেপাল ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর। সহিংস বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে কাকে আনা হবে তা নিয়ে চলছে তীব্র আলোচনা, আর সবার নজর এখন নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির দিকে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, টানা ছয় ঘণ্টার আলোচনার পর বিক্ষোভকারী তরুণ প্রজন্মের (জেন-জি) প্রতিনিধি হিসেবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। বিক্ষোভকারীরা দাবি জানিয়েছেন— যেসব প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনা কর্মকর্তারা গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সঙ্গে তারা সংবিধানে এমন ধারা যুক্ত করতে বলেছে যাতে কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন।
এছাড়া তারা নিপীড়ন তদন্ত কমিশন গঠন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধের দাবিও জানায়।
সুশীলা কার্কির প্রেক্ষাপট
সুশীলা কার্কি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান। তার নেতৃত্বে দুর্নীতির মামলায় তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী দোষী সাব্যস্ত হন, দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষের প্রধানকে অপসারণ করা হয়। তবে এর পর তাকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিশংসনের মুখে পড়তে হয়েছিল।
তিনি কৃষক পরিবারের সন্তান, সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। কৈরালা পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। ভারতের বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে এমএ এবং পরে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বের বিষয়টি দ্রুত ঠিক করা হবে যাতে দেশ আবার স্বাভাবিক পথে ফিরে আসে। বিশ্লেষকদের মতে, সুশীলা কার্কির মতো দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের ব্যক্তি অন্তর্বর্তী সরকারে আসলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে এখনো বিক্ষোভ চলছে। সেনাবাহিনী শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষ আশাবাদী যে একটি গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে সহিংসতা থামবে এবং দেশ পুনরায় স্থিতিশীল হবে।