• হোম > রাজনীতি > শামীমের বিরুদ্ধে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের নতুন অভিযোগ

শামীমের বিরুদ্ধে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের নতুন অভিযোগ

  • সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০৪
  • ৫৩

---

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন যে, শামীম হোসেন জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের সহযোগী ছিলেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শামীমের রাজনৈতিক অতীত, তার বর্তমান অবস্থান এবং তার নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইলিয়াস হোসেনের মতে, শামীমের এই উত্থান কিছুটা রহস্যময় এবং তার পিছনে কিছু গোপন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

জরিপের ফলাফলে শামীমের উত্থান:
সম্প্রতি ঢাকার দুইটি সংস্থা—যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চার এবং বেসরকারি সংস্থা ন্যারেটিভ—ডাকসু নির্বাচনের ওপর দুটি জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। সোচ্চারের জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন ৯৯১ জন শিক্ষার্থী, আর ন্যারেটিভের জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন ৫২৬ জন শিক্ষার্থী। জরিপে দেখা গেছে যে, ৮৪% শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান এবং ৮৭% শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে, অনেক শিক্ষার্থী এখনও তাদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, বিশেষ করে নারী ভোটারদের মধ্যে ৫৪% এবং পুরুষ ভোটারদের মধ্যে ২৪% এখনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম।

এটি স্পষ্ট করে যে, ডাকসু নির্বাচনে এখনো একটি বড় অংশের ভোটার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি এবং তাদের ভোটে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে। এখানে নারীদের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদিও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্যানেল নয়, বরং ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার পক্ষপাতী, তবে তাদের জন্য ব্যক্তিত্ব, একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, সত্যবাদিতা, এবং সংগঠক হিসেবে সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

শামীমের নির্বাচনী সম্ভাবনা:
ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে শামীম হোসেনের ভোট প্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে ইলিয়াস হোসেন কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। সোচ্চারের জরিপে সাদিক কায়েম ৩২% ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন, তবে ন্যারেটিভ জরিপে শামীম হোসেন তার কাছাকাছি অবস্থানে আছেন। এটি প্রমাণ করে যে, শামীমের জন্য বেশ কিছু সম্ভাবনা রয়েছে এবং তার নির্বাচনী প্রচারণা কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ইলিয়াস হোসেনের মতে, শামীমের এই হঠাৎ উত্থান নির্বাচনী মাঠের হিসাব-নিকাশের ওপর অনেক প্রভাব ফেলেছে। শামীম হোসেন ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের ছাত্র হলেও, তার স্পষ্টভাষী বক্তব্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে আনার দাবিতে তার কার্যক্রম তাকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তুলেছে।

শামীমের রাজনৈতিক অতীত এবং বিতর্ক:
শামীম হোসেন নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করলেও তার রাজনৈতিক অতীত নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক রয়েছে। তিনি দাবি করেছেন যে তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তবে পরবর্তীতে তার সঙ্গে জাসদ ছাত্রলীগের সম্পর্কের তথ্য পাওয়া গেছে। শামীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং তার রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ইলিয়াস হোসেন আরও দাবি করেছেন যে শামীমের নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ এবং জাসদ উভয়ের প্রভাব থাকতে পারে। শামীমের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলেও ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে উল্লেখযোগ্য কিছু পোস্ট পাওয়া যায়নি, যা অনেকের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে।

শামীমের নির্বাচনী অর্থায়ন:
এছাড়া, ইলিয়াস হোসেন অভিযোগ করেছেন যে শামীম হোসেন নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ কর্তৃক পাচার হওয়া টাকা ব্যবহার করছেন। তিনি দাবি করেন যে, শামীমের নির্বাচন প্রকল্পে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাশরুরের সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি আওয়ামী লীগের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হতে পারে।

শামীমের উপস্থিতি ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে:
এছাড়া, ইলিয়াস হোসেন আরও উল্লেখ করেছেন যে শামীম হোসেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আয়োজিত মানববন্ধনে শামীমের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে তিনি কোনোভাবেই রাজনৈতিকভাবে অরাজনৈতিক নয়।

শামীমের নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, শামীম নিজেকে অরাজনৈতিক পরিচয় দিলেও তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে স্পষ্টভাবে ছাত্রলীগের প্রভাব রয়েছে।

এটা কি শুধুই নির্বাচন নাকি অন্য কিছু?
শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন উঠছে—শামীম হোসেনের এই রাজনৈতিক উত্থান কি শুধুই ডাকসু নির্বাচনের জন্য নাকি এর পেছনে কোনো বড় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে? ইলিয়াস হোসেন এই প্রশ্ন তুলেছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে সাবধান থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, শামীম হোসেনের সাথে আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় এজেন্সি ‘র’ এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যা এই নির্বাচনী মাঠে মীরজাফরের ভূমিকা পালন করতে পারে।

উপসংহার:
ডাকসু নির্বাচনে শামীম হোসেনের প্রার্থীতা এবং তার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। ইলিয়াস হোসেনের অভিযোগ এবং শামীমের অতীত কার্যক্রম থেকে এটি স্পষ্ট যে, শামীমের উত্থান কোনও সাধারণ বিষয় নয়। তার নির্বাচনী প্রচারণার পিছনে হয়তো কোনো বড় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে, শিক্ষার্থীদের উচিত সাবধান থাকা এবং এই নির্বাচনের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা, যাতে কোনো রাজনৈতিক কৌশল তাদের ভোটের অধিকারকে প্রভাবিত না করতে পারে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4544 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 02:56:34 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh