রাজবাড়ী ও রাজশাহীতে গতকাল শুক্রবার পৃথক দুটি খানকায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করেছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার খানকায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং পাল্টা সংঘর্ষে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অপরদিকে, রাজশাহীতে একটি খানকায় হামলা চালিয়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়। উভয় ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার খানকায় হামলা ও সংঘর্ষ
গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার খানকায় হামলার ঘটনা ঘটে শুক্রবার দুপুরে। সেখানে উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার কবর অবমাননা করে মরদেহে অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার পর, স্থানীয় ভক্তরা পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এই সংঘর্ষে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের জুটমিস্ত্রিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রাসেল মোল্লা (২৮) নিহত হন এবং শতাধিক লোক আহত হন। আহতদের মধ্যে ২২ জনকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়, এবং ১৯ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হলেও, সংঘর্ষ থামানো সম্ভব হয়নি। জনতা রাসেল মোল্লার মরদেহ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর পুড়িয়ে দেয়, যা এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, তবে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সরকারের তীব্র নিন্দা ও ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা
নুরাল পাগলার কবর অবমাননা ও মরদেহে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা দেশের আইন, সভ্যতা ও মূল্যবোধের প্রতি সরাসরি আঘাত। এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীতে খানকা শরিফে হামলা
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে গতকাল জুমার নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা একটি খানকা শরিফে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। হামলার মূল কারণ হিসেবে জানা গেছে, খানকায় অনুষ্ঠিত তিন দিনের মিলাদ মাহফিলে নারী শিল্পীদের অংশগ্রহণ এবং মুর্শিদি গান পরিবেশন নিয়ে এলাকার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লি ওই খানকায় হামলা করে এবং খানকার বহু অংশ ভাঙচুর করে।
খানকার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুর রহমান ভাণ্ডারী প্রায় ১৫ বছর আগে এই খানকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরই মধ্যে তিন দিনের মিলাদ মাহফিলের আয়োজন চলছিল, যা নিয়ে এলাকার কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট ছিলেন।
পুলিশের পদক্ষেপ ও বর্তমান পরিস্থিতি
গোয়ালন্দে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাজশাহীতেও পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।
এলাকার অবস্থা
গোয়ালন্দে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত, এবং এলাকাবাসী সজাগ অবস্থায় রয়েছে। আশেপাশের এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, এবং পুলিশ প্রশাসন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
উপসংহার
রাজবাড়ী ও রাজশাহীর দুটি খানকায় হামলা ও সহিংসতার ঘটনা দেশজুড়ে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং আইনশৃঙ্খলার অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি, এ ধরনের সহিংসতা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা যাচ্ছে।