রাজধানী ঢাকা, কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবারও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে সংঘটিত এই হামলা, জাপা ও গণঅধিকার পরিষদে বিরোধের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে সামনে এসেছে। হামলার পর সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, এবং এই ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
শাহবাগে গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশ ও মিছিল
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল বিকেল ৫টার দিকে, যখন গণঅধিকার পরিষদ শাহবাগে ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবিতে এক সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের সূচনা হতে যাচ্ছে। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে রওনা দেন।
হামলার ঘটনা
মিছিলটি যখন জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের কাছে পৌঁছায়, তখন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কিছু লোক কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। ঘটনাস্থল থেকে জানা যায় যে, প্রায় আধাঘণ্টা ধরে চলা এই হামলার ফলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের নিচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভবনের আসবাবপত্র, নথিপত্র, এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য পুড়ে যায়। হামলাকারীরা এরশাদের ম্যুরাল ভাঙচুরও করে।
পুলিশের পদক্ষেপ
হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালায়। এর ফলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
গণঅধিকার পরিষদের প্রতিক্রিয়া
গণঅধিকার পরিষদ হামলার জন্য তাদের নেতাকর্মীদের দায়ী করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানায় যে, হামলা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা, যারা জাপার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত ছিল। গণঅধিকার পরিষদ আরও দাবি করেছে যে, তাদের সংগঠনকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতি করার জন্য একটি পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের উপদেষ্টা আবু হানিফ জানিয়েছেন, “জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের ফলে জনগণের ক্ষোভ বেড়ে গেছে।”
জাতীয় পার্টির প্রতিক্রিয়া
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, “গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” তিনি বলেন, “যদি সরকার দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।”
এছাড়া, জাপার যুব কমিটির আলম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “হামলা শুরু হলে তারা কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন, কিন্তু হামলার আগেই তারা চলে যান।”
বিএনপির নিন্দা ও প্রতিবাদ
বিএনপিও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দাবি করেছে যে এই ধরনের সহিংসতা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। তারা আশা করছে যে সরকার দ্রুত এই হামলাকারীদের শনাক্ত করবে এবং শাস্তি দেবে।
আগের হামলার সাথে সম্পর্ক
এটি প্রথমবার নয়, এর আগে ২৯ আগস্ট, গণঅধিকার পরিষদ এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করতে হয়েছিল। সেই সময়েও জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা হয়েছিল, তবে তা ছিল সীমিত পরিসরে।
এরপর, ৩০ আগস্ট দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। খুলনা, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ একাধিক জায়গায় এই ধরনের সহিংসতা দেখা গেছে।
পরিসমাপ্তি
এই হামলার ঘটনা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংসতার এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ধরনের সহিংসতার চিত্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য উদ্বেগজনক। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আশা করছে যে তারা দ্রুত এই ধরনের সহিংসতার মোকাবিলা করতে পারবে।