“No Meeting Day” বলতে আমরা কী বুঝি?
আমাদের দেশে এখনো এই কার্যক্রম শুরু হয়নি, তাই অনেক অফিস কর্মীই নীতিটি সম্পর্কে জানেন না। “নো মিটিং ডে” হলো এমন একটি নির্দিষ্ট দিন, যেখানে কোনো অভ্যন্তরীণ মিটিং রাখা হয় না। এই দিনে কর্মীরা কোনো সভায় অংশগ্রহণ না করে তাদের নির্ধারিত কাজের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে পারেন।
কেন বাংলাদেশে এটি এখনো অপ্রচলিত?
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে এখনো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বড় কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নো মিটিং ডে’ চালু করেনি। এ কারণে এটি এখনও নীতিগতভাবে প্রচলিত নয়। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রয়োগ থাকলে এ থেকে অবশ্যই সাফল্য অর্জন সম্ভব। এমন নীতি বিশেষ করে সেইসব কর্মক্ষেত্রে জরুরি, যেখানে সারাদিন মিটিং চলতে থাকে এবং কর্মীরা মনোযোগীভাবে কাজ করার সুযোগ পান না।
বাংলাদেশে কিভাবে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে?
প্রথমে বহুজাতিক কোম্পানি বা আইটি প্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে চালু করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ম্যানেজার তার টিমে সপ্তাহে একদিন কোনো অভ্যন্তরীণ মিটিং না রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন। পুরো কোম্পানিতে প্রয়োগের আগে একটি টিমে পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাস চালিয়ে পরে ফিডব্যাক নেওয়া হলে বাস্তবসম্মত কৌশল নির্ধারণ করা সহজ হবে। নীতি চালুর সময় স্থানীয় সংস্কৃতি ও অভ্যাস বিবেচনায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন দুপুরের নামাজ ও খাবারের সময় মিটিং এড়ানো স্বাভাবিকভাবে কার্যকর হতে পারে।
No Meeting Day – সম্ভাব্য নিয়মাবলী
প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত “নো মিটিং ডে” হিসেবে নির্ধারণ করা যেতে পারে। এদিন অভ্যন্তরীণ মিটিং, কল বা প্রেজেন্টেশন নিষিদ্ধ থাকবে, তবে জরুরি প্রয়োজনে টিম ম্যানেজারের অনুমতি নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনীয় আলোচনা ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ বা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুলের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। কর্মীরা এদিন ডকুমেন্টেশন, ডাটা বিশ্লেষণ, গবেষণা বা সৃজনশীল কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন। কোনো সহকর্মীকে ওই দিনের জন্য মিটিং আমন্ত্রণ পাঠানো যাবে না। নীতি কার্যকর হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে HR বা ম্যানেজমেন্ট মাসিক ফিডব্যাক সংগ্রহ করবে।
গ্লোবাল উদাহরণ
অনেক গ্লোবাল কোম্পানি ইতিমধ্যেই এই নীতি চালু করেছে। যেমন, Facebook (Meta) ও Canva প্রতি বুধবার “No Meeting Day” পালন করে, Shopify চালু করেছে Meeting Reduction Policy, Citi প্রবর্তন করেছে “Citi Reset Day” শুক্রবারে, আর HubSpot ও LinkedIn-এও সপ্তাহে অন্তত একটি দিন মিটিং-মুক্ত রাখা হয়।
কেন দরকার?
গবেষণায় দেখা গেছে, মিটিং উৎপাদনশীলতা প্রায় ৩০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত মিটিং প্রায়ই কাজের ধারাবাহিকতায় বাধা সৃষ্টি করে। নির্দিষ্ট দিনে মিটিং না থাকলে কর্মীরা তাদের কাজে গভীর মনোযোগ দিতে পারেন, যা শুধু দক্ষতাই বাড়ায় না, বরং কাজের অভিজ্ঞতাকেও আরামদায়ক করে তোলে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
সব প্রতিষ্ঠানের জন্য এই নীতি সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে। কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য। ফলে নো মিটিং ডে চালু করলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বিলম্ব হতে পারে, আবার একদিন বাদে মিটিং জমে গেলে কর্মীদের চাপও বাড়তে পারে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নীতিটি ধাপে ধাপে চালু করা উচিত, প্রথমে ছোট টিমে প্রয়োগ করে পরে প্রসারিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি জরুরি মিটিংয়ের জন্য স্পষ্ট ব্যতিক্রম নির্ধারণ করা, যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম (ইমেইল, চ্যাট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল) ব্যবহার বাড়ানো এবং মিটিং সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। নিয়মিত ফিডব্যাকের ভিত্তিতে প্রয়োজনে নীতি সংশোধন করা যেতে পারে।
সিদ্ধান্ত
অফিস কালচারে ‘No Meeting Day’ প্রয়োজনীয়। এটি কর্মীদের মনোযোগ বাড়ায়, চাপ কমায় এবং উৎপাদনশীলতা উন্নত করে। আধুনিক কর্মপরিবেশে মিটিং-মুক্ত একটি দিন কর্মীদের জন্য শুধু আরামদায়ক নয়, বরং কার্যকরও বটে। তাই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ধীরে ধীরে এ নীতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
অভ্যন্তরীণ মিটিং হলো প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কর্মীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভা।
পাইলট নীতি হলো কোনো পরিকল্পনা বা প্রকল্প বড় আকারে চালুর আগে সীমিতভাবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ।
HR বা ম্যানেজমেন্ট অনলাইন সার্ভে, ওয়ান-অন-ওয়ান মিটিং, টিম ডিসকাশন, অ্যানোনিমাস ফিডব্যাক বক্স বা মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মাসিক ফিডব্যাক সংগ্রহ করতে পারে।