অফিসে অনেকের ধারণা, যত বেশি সময় ধরে কাজ করা যায়, তত দ্রুত প্রমোশনের সুযোগ মেলে। তাই কেউ কেউ নিয়মিত ওভারটাইম করেন, এমনকি ছুটির দিনেও কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এত কাজ করলেই কি সত্যিই প্রমোশন পাওয়া যায়? বাস্তবতা হচ্ছে, বেশি সময় দিয়ে কাজ করা সবসময় বেশি সাফল্য আনে না। প্রমোশন নির্ভর করে কাজের গুণমান, কৌশলগত চিন্তাভাবনা, সম্পর্ক তৈরি এবং নেতৃত্ব প্রদর্শনের মতো বিষয়গুলোর ওপর।
শুধু বেশি কাজ করলে কেন প্রমোশন হয় না, তার পেছনে কিছু কারণ আছে। গবেষণা বলছে, প্রমোশনের ক্ষেত্রে মাত্র ৪০% গুরুত্ব দেওয়া হয় পারফরম্যান্সকে, বাকিটা নির্ভর করে যোগাযোগ, নেতৃত্ব ও স্ট্র্যাটেজির মতো বিষয়ের ওপর। অনেকেই বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করেন, সময়মতো অফিসে আসেন, এমনকি অসুস্থ হলেও ছুটি নেন না। কিন্তু তারা প্রমোশনের সুযোগ পান না, কারণ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবসময় বোঝেন না কে কতটা সময় দিয়েছে। বরং তারা খোঁজেন এমন কর্মীকে, যিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য বাস্তব ভ্যালু অ্যাড করতে পারেন।
এখানেই আসে স্মার্ট ওয়ার্কের গুরুত্ব। হার্ড ওয়ার্ক মানে হলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করা, আর স্মার্ট ওয়ার্ক মানে কৌশল ব্যবহার করে কম সময়ে বেশি ফলাফল আনা। যেমন, একজন কর্মী যদি ম্যানুয়ালি ডেটা প্রসেস করতে ১০ ঘণ্টা সময় নেন, আরেকজন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটা ৩০ মিনিটে করে ফেলেন—তাহলে ম্যানেজমেন্টের কাছে দ্বিতীয় কর্মীটাই বেশি মূল্যবান হবেন। তাই স্মার্ট ওয়ার্কাররা সবসময় কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করেন, অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেন এবং প্রযুক্তি কাজে লাগান।
তবে প্রমোশনের জন্য শুধু বুদ্ধিমত্তা বা প্রযুক্তি ব্যবহারই যথেষ্ট নয়; কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতাও অর্জন করতে হয়। যেমন—সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, কার্যকর যোগাযোগ, নেতৃত্ব প্রদর্শন, এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা। এগুলো একজন কর্মীকে শুধু দক্ষ করে তোলে না, বরং প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নেতা হিসেবেও প্রস্তুত করে। একইসাথে অফিসের রাজনীতি ও নেটওয়ার্কিংও এখানে ভূমিকা রাখে। সম্পর্ক তৈরি করা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং কৌশলগত নেটওয়ার্ক তৈরি করার মাধ্যমেই কর্মীরা ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে পারেন।
ম্যানেজমেন্ট যখন কাউকে প্রমোশনের জন্য বিবেচনা করে, তখন তারা শুধু কাজের পরিমাণ দেখেন না। তারা দেখেন ফলাফল, নির্ভরযোগ্যতা, দলগত অবদান এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সম্ভাবনা। তাই ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্টকেও একটি প্রজেক্টের মতো ধরে এগোনো উচিত। বছরে একবার নিজের SWOT অ্যানালাইসিস করা, ম্যানেজারের সঙ্গে নিয়মিত ফিডব্যাক শেয়ার করা এবং লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা করা এতে সহায়তা করে।
প্রমোশন নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। অনেকে ভাবেন, ভালো কাজ করলেই ম্যানেজমেন্ট খেয়াল করবে। বাস্তবে নিজের অবদান দৃশ্যমান করে তুলতে হয়। কেউ মনে করেন, প্রমোশনের জন্য অন্তত ১২ মাস অপেক্ষা করতে হয়। আসলে সঠিক প্রস্তুতি থাকলে যেকোনো সময়ই আবেদন করা যায়। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন, ছুটি না নিলে প্রমোশন পাওয়া সহজ হয়। কিন্তু সত্য হলো, কাজ ও জীবনের ভারসাম্য এবং ফলপ্রসূ পারফরম্যান্সই বেশি গুরুত্ব বহন করে।
সবশেষে বলা যায়, অফিসে বেশি কাজ করা অবশ্যই দরকারি, তবে প্রমোশনের জন্য সেটি একা যথেষ্ট নয়। আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় সফল হতে হলে দরকার কঠিন পরিশ্রম, স্মার্ট ওয়ার্ক, নেতৃত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা, নেটওয়ার্কিং এবং নিজের অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরার ক্ষমতা। প্রমোশন একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া, যেখানে শুধু ঘাম ঝরানো নয়, বরং সামগ্রিক দক্ষতা ও কৌশলগত চিন্তাভাবনাই আসল চাবিকাঠি।