• হোম > অর্থনীতি | ফিচার > ঝুঁকিতে দেশের ব্যাংক খাত

ঝুঁকিতে দেশের ব্যাংক খাত

  • বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ১২:৩২
  • ৭৭৫

দেশের ব্যাংক খাত
কোনো দেশের ব্যাংক খাতের সক্ষমতা কেমন জেড-স্কোরে প্রাপ্ত নম্বর দেখেই তা বোঝা যায়। বিশ্বের সব দেশের ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে প্রতি বছরই জেড-স্কোর প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। মৌলিক এ সূচকে বেশি নম্বরপ্রাপ্ত দেশের ব্যাংকগুলোর ওপর ভরসা রাখে বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো, এড়িয়ে চলে কম নম্বর পাওয়া দেশের ব্যাংককে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থাও এখন এড়িয়ে চলার মতো। কারণ জেড-স্কোরের এ সূচকের একেবারেই তলানিতে দেশের ব্যাংক খাত। যদিও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে প্রতিবেশী দেশগুলো।

জেড-স্কোরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রাপ্ত নম্বর ৭ দশমিক ১। অথচ নেপাল ও ভুটানের মতো ছোট দেশগুলোর ব্যাংক খাতের নম্বর ২৭-এর বেশি। মৌলিক এ সূচকে  বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, এমনকি পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডাও। উগান্ডার ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর ১৩ দশমিক ৯। দেশটিতে খেলাপি ঋণের হারও ৫ শতাংশের নিচে। যদিও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো যেকোনো দেশের ঋণপত্র খোলার আগে সে দেশের ‘কান্ট্রি রিস্ক’ ও ‘ক্রেডিট রিস্ক’ আমলে নেয়। একই সঙ্গে আমলে নেয়া হয় ব্যাংক খাতের জেড-স্কোরকেও। কান্ট্রি রেটিং শক্তিশালী থাকলে জেড-স্কোরকে অনেক ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব দেয়া হয়। যদিও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জেড-স্কোরের মতোই কান্ট্রি রেটিংও দুর্বল। এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে বিদেশী ব্যাংকগুলো।

ব্যাংক খাতের এ দুরবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেক দুর্বল অর্থনীতির দেশের তুলনায়ও খারাপ বাংলাদেশের অবস্থা। ঋণপত্রের গ্যারান্টি বাবদ প্রায় ৪ শতাংশ কমিশন নিচ্ছে বিদেশী ব্যাংকগুলো। যদিও বাংলাদেশের সমঅর্থনীতির অনেক দেশের ক্ষেত্রে এ কমিশন ১ শতাংশেরও কম। এলসি কমিশন বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পিছিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসায়িক সক্ষমতাও।

প্রতিটি দেশের ব্যাংক খাতের সক্ষমতার ভিত্তিতে জেড-স্কোর তৈরি করে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের ব্যাংক খাত শক্তিশালী, সেসব দেশ এ তালিকায় বেশি নম্বর পায়। জেড-স্কোর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য হলো, কোনো দেশের ব্যাংক খাতের অক্ষমতা প্রকাশ পায় তার জেড-স্কোরের মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় একটি দেশের ব্যাংক খাতের বাফার (মূলধন ও রিটার্ন) এবং রিটার্নের অনিশ্চয়তাকে তুলনা করা হয়। এটি পরিমাপের সূত্র হলো (আরওএ+(মূলধন/ সম্পদ))/ এসডি(আরওএ)। এখানে আরওএ বা রিটার্ন অন অ্যাসেট বলতে বোঝায় কোনো আর্থিক বছরে কোম্পানির মোট মুনাফার সঙ্গে মোট সম্পদের অনুপাত, যা শতাংশে প্রকাশ করা হয়। এসডি (আরওএ) বলতে বোঝায় আরওএর গড় থেকে বিচ্যুতিকে।কোনো দেশের ব্যাংকের জেড-স্কোর পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যাংকভিত্তিক আলাদা তথ্য যোগ করার মাধ্যমে আরওএ, মূলধন ও সম্পদের হিসাব করা হয়। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বৈশ্বিক ব্যাংক খাতের ব্যাংকস্কোপ তথ্যভাণ্ডার থেকে।

ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে বিশ্বে খুব কম ব্যাংকই আছে, যার মূলধন ১০ কোটি ডলারের নিচে। অথচ বাংলাদেশে রয়েছে অনেকগুলো ছোট ব্যাংক, যেগুলো দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় বোঝা। ব্যাংকের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতাও বাংলাদেশে খাতটিকে দুর্বল করছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে বিপদগ্রস্ত ঋণ (স্ট্রেসড লোন)। দেশের ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত চিত্রই বিশ্বব্যাংকের জেড-স্কোরে প্রতিফলিত হয়েছে।

বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিটিব্যাংক এনএ। ব্যাংকটির বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা এ ব্যাংকারের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো ওভার এক্সপোজার। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন সক্ষমতা খুবই কম। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ তিনজন গ্রাহক খেলাপি হলে ২১টি ব্যাংকের মূলধন শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টেই এ পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। দেশের প্রায় সব ব্যাংকই এলসি দায় পরিশোধে অনাকাঙ্ক্ষিত দেরি করছে। এটি বড় ধরনের অপরাধ না হলেও পদ্ধতিগত ত্রুটি। এসব পর্যালোচনা করেই বিশ্বব্যাংক জেড-স্কোর তৈরি করে। স্বাভাবিকভাবেই এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/440 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 08:35:31 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh