• হোম > রাজনীতি > সংস্কারে পথ হারালো কি অন্তর্বর্তী সরকার?

সংস্কারে পথ হারালো কি অন্তর্বর্তী সরকার?

  • বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫২
  • ১১৬

---

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে যে প্রত্যাশা ও উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা ক্রমেই ম্লান হয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন— “অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে?”

নাগরিক সংলাপে নতুন উদ্যোগ
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত নাগরিক সংলাপে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামে নতুন উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও গবেষকরা অংশ নেন। প্রধান অতিথি ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

ঝড়ের ভেতরে বৈষম্যবিরোধী চেতনা
ড. দেবপ্রিয় বলেন, “বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ ঝড় বয়ে যাচ্ছে— রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে এর অভিঘাত স্পষ্ট। কিন্তু ঝড়ের মাঝেই সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো বৈষম্যবিরোধী চেতনা, যা জুলাই অভ্যুত্থান থেকে এসেছে। এখন প্রশ্ন— অন্তর্বর্তী সরকার কি এই চেতনা আঁকড়ে ধরতে পারছে, নাকি কোথাও পথ হারাচ্ছে?”

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনুপস্থিতি
তিনি অভিযোগ করেন, সংস্কার কমিটি ও কমিশনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সীমিত পরিসরে আলোচনা হয়েছে। ফলে সংস্কারের গতি স্থবির হয়ে পড়ছে।

রেহমান সোবহানের সতর্কতা
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশে সংস্কারের কোনো গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া তৈরি হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে মাত্র ছয় মাস বাকি। এখনো যদি কার্যকর পদক্ষেপ শুরু না হয়, তবে সংস্কার বাস্তবায়িত হবে কিভাবে?”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার পাস হওয়ার কথা থাকলেও সেই সংস্কৃতি তৈরি হয়নি। শুধু সেমিনার নয়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করাই নাগরিক সমাজের দায়িত্ব।”

সংস্কারের পথে বড় অন্তরায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, সংস্কার শুধু পরিকল্পনার বিষয় নয়; রাষ্ট্রের সক্ষমতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এর সফলতা। কিন্তু আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক এলিটদের স্বার্থসংঘাত বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রান্তিক মানুষের কথা বাদ
পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যাদের জন্য সংস্কার দরকার, তারা আলোচনার টেবিলে অনুপস্থিত। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কোনো সংস্কার সফল হতে পারে না।”

আইনশৃঙ্খলার মানসিকতায় পরিবর্তন নেইপ্রান্তিক মানুষের কথা বাদ

পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যাদের জন্য সংস্কার দরকার, তারা আলোচনার টেবিলে অনুপস্থিত। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কোনো সংস্কার সফল হতে পারে না।”

আইনশৃঙ্খলার মানসিকতায় পরিবর্তন নেই

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “অভ্যুত্থান-পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রত্যাশার প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি, বরং মানুষের মাঝে শঙ্কা বেড়েছে।

কিছুটা আশার আলো
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আগের অনেক সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি, এবারও সেই শঙ্কা আছে। তবে আমরা আশাবাদী— এবার সংস্কার সফল হবে।”

১০০ দিনের কর্মসূচির প্রস্তাব
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রস্তাব দেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ১০০ দিনের কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, জ্বালানি, নারীর সমতা ইত্যাদি খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সুধীজনদের আহ্বান
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রওনক জাহান, বদিউল আলম মজুমদার, সুলতান আহমেদ, শাহীন আনাম, রাশেদা কে. চৌধুরী, আসিফ ইব্রাহীম, ফজলুল হকসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, সংস্কারকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাস্তবসম্মত ও জনগণকেন্দ্রিক হতে হবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4406 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:14:28 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh