ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে চলমান আইনি জটিলতার অবসান হলো। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শেষে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো বাধা থাকল না।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রায়ের ভাষ্য অনুযায়ী এই আদেশ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
আদালতে কারা ছিলেন
শুনানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আর জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী।
রিটের অভিযোগ ও বিতর্ক
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্র শিবির-সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন বামজোট মনোনীত প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম।
রিটে অভিযোগ করা হয়—
-
ফরহাদ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন।
-
এরপর তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্যানেলে প্রার্থী হতে পারেন— এ বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।
এই প্রার্থিতা ঘিরেই হাইকোর্ট প্রথমে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন।
হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগে
-
১ সেপ্টেম্বর বিকেলে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন ও ভোটার তালিকা তৈরির কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন।
-
তবে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দেন।
-
পরে মামলাটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ওঠে, যেখানে আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত শুনানি হয়।
ভোটের প্রস্তুতি ও প্রার্থীর সংখ্যা
তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রধান প্রধান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা—
-
ভিপি (সহ-সভাপতি): ৪৫ জন
-
জিএস (সাধারণ সম্পাদক): ১৯ জন
-
এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক): ২৫ জন
অন্যান্য সম্পাদকীয় পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন—
-
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: ১৭ জন
-
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: ১৯ জন
-
আন্তর্জাতিক সম্পাদক: ১৪ জন
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: ১২ জন
-
ক্রীড়া সম্পাদক: ১৩ জন
-
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: ১৫ জন
-
সমাজসেবা সম্পাদক: ১৭ জন
-
মানবাধিকার সম্পাদক: ১১ জন
-
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক: ১৫ জন
-
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: ৯ জন
-
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: ১২ জন
-
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: ১১ জন
সদস্য পদেই সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে—১৩টি আসনের বিপরীতে লড়ছেন মোট ২১৭ জন প্রার্থী।
প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য
ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অনুশীলন হিসেবে দেখা হয়। দীর্ঘদিন পর এ নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবে প্রার্থিতা নিয়ে বিতর্ক ও আইনি জটিলতা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আদালতের এ রায়ের ফলে ৯ সেপ্টেম্বর ভোটে যাওয়ার পথ সুগম হলো। এখন শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নির্বাচন যেন স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।