ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলী হুসেনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসনের বক্তব্য
আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলী হুসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র। তার শ্রেণি রোল ৫৪ এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২০২০২১২৭৬৮। একই সঙ্গে অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিষয়ক কমিটিতেও প্রেরণ করা হয়েছে।
শাস্তির মাত্রা ও এখতিয়ার
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রক্টরের এখতিয়ার অনুযায়ী এটি সর্বোচ্চ শাস্তি। তবে প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিষয়ক কমিটির তদন্ত শেষে আরও কঠোর শাস্তি হতে পারে।
আগের পদক্ষেপ
নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকির ঘটনায় মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।
-
প্রক্টর অফিস তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে।
-
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন পৃথকভাবে দুই সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি করে।
প্রক্টর অফিসের তদন্তেই আলী হুসেনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
শিক্ষার্থী সমাজের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, ছয় মাসের বহিষ্কার যথেষ্ট নয়। নারী প্রার্থীকে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার মতো ভয়ংকর ঘটনায় আজীবন বহিষ্কার এবং আইনের আওতায় আনার দাবি তুলেছেন তারা।
একজন শিক্ষার্থী বলেন,
“এ ধরনের হুমকি শুধু একজন প্রার্থী নয়, পুরো নারী সমাজকে ভীত করার চেষ্টা। তাই এর বিচার দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত।”
নারী অধিকার সংগঠনগুলোর দাবি
কয়েকটি নারী অধিকার সংগঠন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীর বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তি দাবি করেছে। তারা বলছে, শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার নয়, ফৌজদারি আইনে মামলা হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মত
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নারী প্রার্থীরা যাতে নিরাপদে অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রেক্ষাপট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এ ধরনের হুমকি পুরো প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আগামীর প্রশ্ন
এখন প্রশ্ন উঠছে—
-
ছয় মাস বহিষ্কার যথেষ্ট শাস্তি কি না?
-
যৌন নিপীড়নবিষয়ক কমিটি কী পদক্ষেপ নেবে?
-
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি এ বিষয়টি আইনের আওতায় নেবে?
উপসংহার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের বিরুদ্ধে হুমকি ও সহিংস ভাষা ব্যবহারের মতো ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী সমাজ এবং নারীবাদী সংগঠনগুলো আরও কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর অংশগ্রহণ ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূচনা হলো।