আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল আবারও কেঁপে উঠলো ভয়াবহ ভূমিকম্পে। রবিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে দেশটির সীমান্তবর্তী কয়েকটি প্রদেশে ৬ দশমিক শূন্য মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে। অগভীর হওয়ায় এর প্রভাব ছিল মারাত্মক।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্গম কুনার প্রদেশ। এখানকার নুর গাল, সাওকি, ওয়াতপুর, মানোগি এবং চাপা দারা জেলায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৮১২ ছাড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পাহাড়ি হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টি, ভূমিধস ও বন্যার কারণে উদ্ধার অভিযান আরও জটিল হয়ে উঠেছে। অনেক দুর্গম গ্রামে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে তালেবান সরকার।
আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান আন্তর্জাতিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা জানান, “অনেক মানুষ প্রাণ ও ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। একা আমাদের পক্ষে এ দুর্যোগ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (ইউএনওসিএইচএ) জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কপথ ভেঙে পড়েছে, ফলে উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে চলছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
-
যুক্তরাজ্য জরুরি সহায়তা ঘোষণা করেছে, তবে তা তালেবান প্রশাসনের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে।
-
চীন সহায়তা দিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
-
ভারত ইতোমধ্যেই এক হাজার পরিবারের জন্য তাঁবু ও ১৫ টন খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছে।
-
যুক্তরাষ্ট্র শোক প্রকাশ করেছে, তবে সরাসরি সহায়তার বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।
ভয়াবহতার চিত্র
ধসে পড়া ঘরবাড়ির নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে। কুনার প্রদেশের নুর গাল থেকে জাফর খান গোজার নামে এক তরুণ জানান, “আমাদের বাড়ির দেওয়ালগুলো ভেঙে পড়েছে। অনেক শিশু মারা গেছে, অনেকেই আহত।”
পটভূমি
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে এটি তৃতীয় বড় প্রাণঘাতী ভূমিকম্প। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, বিদেশি সহায়তা বন্ধ হওয়া এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটি আগেই বিপর্যস্ত ছিল। এবার নতুন এই দুর্যোগ তাদের আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে।