গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দীর্ঘ ৪৭ বছরের অভিযাত্রা পেরোল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আত্মত্যাগ, প্রতিরোধ ও গণআকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠা এই দলটি আজও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি প্রধান শক্তি।
১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর রাজনৈতিক শূন্যতা কাটিয়ে ওঠার প্রয়াসে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা বটমূলে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার বহুদলীয় গণতন্ত্রের অঙ্গীকার এবং ১৯ দফা কর্মসূচি দেশবাসীর কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।
নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা
১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাসদস্যদের হাতে শহীদ হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এরপর দলের নেতৃত্বে আসেন তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। রাজপথের আপোষহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে গতিশীল করে ১৯৯১ সালে গণভোটে জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসেন এবং দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। পরে তিনি আরও দু’দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ দশকের পরবর্তী সময়ে বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি হন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে শহীদ জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আন্দোলনকে নতুন রূপ দেওয়া, তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা এবং ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপনের মাধ্যমে তিনি দলকে নতুন প্রজন্মের জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করছেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিজ্ঞা
৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেওয়া এক বাণীতে তারেক রহমান বলেন, “জনগণের অধিকার আদায়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই বিএনপির মূল লক্ষ্য।”
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন তারেক রহমানের ৩১ দফার রূপরেখা আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিশা দেখাচ্ছে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনে করেন, বিএনপি গণমানুষের দল হিসেবেই টিকে আছে। আর ড. মঈন খান বলেন, “আগামী প্রজন্মের জন্য গণতন্ত্রভিত্তিক বাংলাদেশ গড়াই বিএনপির লক্ষ্য।”
আগামীর চ্যালেঞ্জ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে সমৃদ্ধ বিএনপিকে এখন নতুন বাস্তবতায় নিজেদের পুনর্গঠন করতে হবে। শুধু ঘোষণায় নয়, কার্যকর কর্মসূচির মাধ্যমে ৩১ দফার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিতে হবে। দলে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়ানো এবং তৃণমূল পর্যায়ে আস্থা ফেরানোই হতে পারে আগামী দিনের মূল চ্যালেঞ্জ।
অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, “জনআস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে বিএনপিকে দলীয় গণতন্ত্র চর্চা জোরদার করতে হবে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি
বিএনপি সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—রমনায় আলোচনা সভা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দেশব্যাপী র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।