• হোম > প্রধান সংবাদ | ফিচার > ব্যাতিক্রম একজন পুলিশের গল্পগাথা

ব্যাতিক্রম একজন পুলিশের গল্পগাথা

  • বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ১৩:২০
  • ১৪৬৬

ডিআইজি হাবিবুর রহমান
শুরুটা এভাবে হলে কেমন হয়।অন্যভাবেও হতে পারে। যে গল্প শুরু আছে, শেষ হয় না কখনো।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি),২০২০ বিকেলে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সরকারি হলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, তিনি বললেন,
‘মুজিববর্ষে’ জনতার আরও কাছে যেতে চাই আমরা।

আশাবাদ ব্যাস্ত করছি, ডিআইজি হাবিব আপনার কথা যেনো প্রতিফলিত হয় দেশের প্রতিটি কোনায়।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ নেই। তবে জঙ্গিবাদ থাকলেও তা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। এখনও তাদের তৎপরতা রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে মাদকের ব্যবহার রয়েছে। মাদক যেভাবে বিস্তার হয়েছে তার জন্য অনেক বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তবে পুলিশের পক্ষে একা মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই জানে কে কে মাদকের সঙ্গে জড়িত। সরাসরি বলতে অসুবিধা থাকলে গোপনে পুলিশকে জানান। অথবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান, আপনার পরিচয় গোপন রাখব আমরা।

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সরকারি হলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সুবিধাবঞ্চিত বেদে সম্প্রদায়ের সঙ্গে মাদক-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ২০২০ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে সরকার। ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করতে চায় পুলিশ। তবে পুলিশ সবসময়ই জনতার। ‘মুজিববর্ষে’ জনতার আরও কাছে যেতে চাই আমরা।

একটু নজর বোলানো যাক এই মানুষটির সামাজিক কিছু কাজে:

মানুষ তৈরির কারিগর ডিআইজি হাবিব

উত্তরণ ফাউন্ডেশন। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমেই হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আলো ছড়ানো হচ্ছে। ঢাকার আশুলিয়া, আমিনবাজার ও বি-বাড়িয়ায় হিজড়াদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি বিউটি পার্লার। এ পার্লারগুলো নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে হিজড়াদের। তাদের মূল পেশার (প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা) বাইরে এনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেদে সম্প্রদায়ের জন্য বুটিকসহ নানা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিক্ষালয়। মুন্সীগঞ্জে একটি স্কুলে বেদেদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখছে। বেদেপল্লীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি হচ্ছে মিউজিয়াম। আর এসব মানবিক কাজে হাত দিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন-ডিসিপ্লিন) হাবিবুর রহমান। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও এনজিও এগিয়ে আসছে।

এ প্রসঙ্গে ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সমাজে উন্নয়নের জন্য পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হবে। তাদের নানাভাবে কর্মমুখী করে গড়ে তুলতে হবে। বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায় মানুষ হয়েও তারা মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত। সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় ও বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে তারা। এ জন্য তাদের আলোর পথ দেখাতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেদেপল্লী ও হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, বুটিক, কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্যাশন হাউস ও বিউটি পার্লারসহ নানা ধরনের কর্মসংস্থানমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষালয়। সারা দেশেই এর কার্যক্রম গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। সংবিধানে সকলের জন্য সে অধিকার রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু। তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সেই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে কাজ করে চলেছেন।’

জানা যায়, ঢাকার অদূরে সাভারের বংশী নদীর তীরে পোড়াবাড়ি, অমরপুর, কাঞ্চনপুর ও বাড্ডা গ্রামে প্রায় দেড় শ বছর আগে বসতি গড়ে তোলেন বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যরা। ওই পল্লীতে তাঁদের সদস্য এখন প্রায় ১৫ হাজারের মতো। আর ব্যতিক্রমী ও মানবিক পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এ মানুষগুলোর জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। কিভাবে একটি জনপদ, একটি সম্প্রদায়কে পাল্টে দেওয়া যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতো অন্যরাও যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সমাজে অভাব-অনটন, হানাহানি থাকবে না বলে অনেকেই মনে করেন।

উত্তরণ শিক্ষালয় আলো ছড়াচ্ছে বেদেপল্লীতে

উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করছে তাঁর এ প্রতিষ্ঠানটি। গত ২৯ এপ্রিল পিছিয়েপড়া বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিগত ‘উত্তরণ কম্পিউটার সেন্টার’ ও ‘উত্তরণ শিক্ষালয়’ নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ খড়িয়া গ্রামের বেদেপল্লীতে। কম্পিউটার সম্পর্কে শিক্ষা আর উত্তরণ শিক্ষালয় থেকে শিশু শ্রেণি থেকে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। আর যাঁরা পাঠদান করান তাঁরাও বেদে সম্প্রদায়ের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া সন্তান। যেসব শিশু স্কুলে যায় তাদের প্রতিদিনকার স্কুলের পড়া ও বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই শিক্ষালয় থেকে। আবার যারা এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি, অথচ পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ আছে তাদের এ শিক্ষালয় থেকে পাঠদানে সহযোগিতা করা হয়। এই শিক্ষালয়ে প্রতিদিন দুই শিফটে ৮০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কথা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. শাকিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি বেদে সম্প্রদায়েরই একজন। এখন লৌহজং বিশ্বদ্যািলয় কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। আরো তিনজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বেদে সম্প্রদায়ের সদস্য এ শিক্ষালয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। পাঠদানের জন্য উত্তরণ ফাউন্ডেশন আমাদের কিছু সম্মানিও দিচ্ছে।’

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিউটি পার্লারগুলো

আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় উত্তরণ বিউটি পার্লার ১-এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সাভারের হেমায়েতপুরে মাওলানা শপিং কমপ্লেক্সে হিজড়াদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য চালু করা হয়েছে ‘উত্তরণ বিউটি পার্লার-২’। এ বিউটি পার্লারের পরিচালনায় আছে পাঁচজন হিজড়া সদস্য। এটা পরিচালিত হচ্ছে হিজড়া সদস্য সোহাগীর মাধ্যমে। এ প্রতিষ্ঠানে আরো কাজ করেন নাসিমা, ঈসা খান, মিলন ও মুন্নি হিজড়া। এ ছাড়া বি. বাড়িয়া পৌর এলাকার টেংকেরপারের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরণ বিউটি পার্লার-৩। জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পার্লারটি যাত্রা শুরু হয়। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এর উদ্বোধন করেন। সঙ্গে ছিলেন, হিজড়াদের বিউটি পার্লারের স্বপ্নদ্রষ্টা পুলিশের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। পার্লারটিতে নারীদের ফেসিয়াল, চুল কাটা, পার্টি সাজ, বউ সাজ ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/430 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 09:18:26 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh