• হোম > অর্থনীতি > বাংলাদেশি টাকা টানা দুই মাস অবমূল্যায়িত: বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণায় নতুন অর্থনৈতিক ইঙ্গিত

বাংলাদেশি টাকা টানা দুই মাস অবমূল্যায়িত: বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণায় নতুন অর্থনৈতিক ইঙ্গিত

  • রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৪৪
  • ৪৭

বাংলাদেশি টাকা অবমূল্যায়ন,বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণায় নতুন অর্থনৈতিক ইঙ্গিত

ই-বাংলাদেশ ডেস্ক

বাংলাদেশি টাকা (BDT) টানা দুই মাস ধরে অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে—যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী অবচাপ থেকে এক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের (BB) সদ্য প্রকাশিত গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ২০২৫ সালের জুনে টাকার ভারসাম্য বিনিময় হার (Equilibrium Exchange Rate) দাঁড়িয়েছে ১২১.৫৫ টাকা, যেখানে বাজারে হার ছিল ১.৭১ টাকা কম। অর্থাৎ, টাকার বর্তমান দরকে অবমূল্যায়িত বলা যায়।

এর আগে টাকা বেশ কয়েক বছর ধরে অতিমূল্যায়িত (Overvalued) ছিল—২০২১ সালে ৯.০৯ টাকা, ২০২২ সালে ৮.১১ টাকা, এবং ২০২৩ সালে ০.২২ টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রথমবারের মতো সামান্য অবমূল্যায়িত হয় ১.১১ টাকা।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবর্তন?

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিমূল্যায়িত টাকা আমদানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য কিছুটা সহায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি রপ্তানি প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি করে এবং বাজারে অস্থিরতা বাড়ায়। বিপরীতে, সামান্য অবমূল্যায়িত টাকা রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা বাড়ায় এবং প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) প্রবাহকে উত্সাহিত করে।

উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থ কী?

এই পরিবর্তন বিভিন্ন খাতে থাকা উদ্যোক্তা, এসএমই এবং স্টার্টআপদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে:

১. রপ্তানিকারক উদ্যোক্তা

অবমূল্যায়িত টাকা মানে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের পণ্য তুলনামূলক সস্তা। গার্মেন্টস, চামড়া, কৃষিপণ্য ও আইটি সেবা রপ্তানিকারকদের জন্য এটি বড় সুবিধা। প্রতিটি ডলার আয়ের বিপরীতে তারা স্থানীয় মুদ্রায় বেশি টাকা পাচ্ছেন, যা মুনাফা ও পুনঃবিনিয়োগের সুযোগ বাড়াচ্ছে।

২. আমদানিকারক ব্যবসায়ী

অন্যদিকে, যেসব উদ্যোক্তা আমদানি নির্ভর কাঁচামাল বা প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেন, তাদের ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে উৎপাদনমুখী এসএমই যারা বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে, তাদের মুনাফার মার্জিন সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি আছে। তাই এই খাতে ব্যবসায়ীরা হয় বিকল্প স্থানীয় উৎস খুঁজবেন, নয়তো খরচ কমাতে নতুন প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাড়াতে হবে।

৩. স্টার্টআপ ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা

আইটি ও ফ্রিল্যান্স সেক্টরের উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি স্বর্ণালি সুযোগ। ডলার আয়ের বিপরীতে তারা বেশি টাকায় রূপান্তর পাচ্ছেন, ফলে লোকাল অপারেশন চালাতে সুবিধা হচ্ছে। তবে, যারা বিদেশি সফটওয়্যার, টুলস বা সাবস্ক্রিপশন আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের খরচ কিছুটা বাড়বে।

৪. কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে অবমূল্যায়িত টাকা বড় সুবিধা। একই সঙ্গে গ্রামীণ উদ্যোক্তারা (যেমন ই-কমার্স বা এগ্রি-টেক ব্যবসা) স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারবেন। তবে সার, যন্ত্রপাতি বা খাদ্যশস্য আমদানিতে ব্যয় বাড়বে।

নীতিগত বার্তা

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২৫ সালের মে মাসে চালু হওয়া সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। এটি একদিকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনছে, অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের জন্য পূর্বানুমানযোগ্যতা (predictability) তৈরি করছে—যা বিনিয়োগ পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে জরুরি।

উদ্যোক্তাদের করণীয়

রপ্তানিকারকদের জন্য: নতুন বাজারে প্রবেশ ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে অবমূল্যায়িত টাকাকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করা উচিত।

আমদানিকারকদের জন্য: খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় বিকল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলে উদ্ভাবন প্রয়োজন।

স্টার্টআপদের জন্য: বিদেশি আয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, একই সঙ্গে খরচ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হতে হবে।

কৃষিভিত্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য: উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করার সময় এসেছে।

উপসংহার

টাকার টানা অবমূল্যায়ন কেবল অর্থনীতির ভারসাম্য আনছে না, বরং উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দিগন্তও উন্মোচন করছে। যাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4269 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 09:52:01 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh