• হোম > অর্থনীতি > বাংলাদেশে রেকর্ড রেমিট্যান্স

বাংলাদেশে রেকর্ড রেমিট্যান্স

  • রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৮
  • ৭৭

---

বাংলাদেশের প্রবাসী আয় গত বছর রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, পাকিস্তান ও নেপালের প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের চেয়েও বেশি ছিল।

এডিবির “Key Indicators for Asia and the Pacific 2025: Measuring Sustainable Global Production” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় হঠাৎ করেই উল্লম্ফন ঘটায়।

গত বছর নেপাল সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে—৩৬ শতাংশ বেড়ে দেশটিতে রেকর্ড ১৪ বিলিয়ন ডলার প্রবাহিত হয়েছে। পাকিস্তানও ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স অর্জন করে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে।

হুন্ডি কমায় প্রবাসী আয় বেড়েছে

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে হুন্ডির ব্যবহার কমে যাওয়া।

তার ভাষায়, “গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থ পাচারকারীরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে হুন্ডি বা অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের চাহিদা কমে যায় এবং প্রবাসী আয়ের বড় অংশ আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে আসতে থাকে।”

এছাড়া বিপুল সংখ্যক নতুন শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন—২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১১.৯৬ লাখ শ্রমিক, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব

প্রবাসী আয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ (বিপিএম-৬ অনুযায়ী) দাঁড়িয়েছে ২৬.১৯ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।

তুলনায় ভারত ও শ্রীলঙ্কা

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত মহামারির পর থেকে টানা প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। ভারতের সাফল্যের বড় কারণ তাদের শক্তিশালী টেকনিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থা ও দক্ষ শ্রমশক্তি।

অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা গত পাঁচ বছরে অস্থির প্রবাহের মধ্যে ছিল। ২০২২ সালে রাজনৈতিক সংকটে দেশটির রেমিট্যান্স প্রায় অর্ধেকে নেমে এলেও ২০২৩ সালে ৫৮ শতাংশ এবং গত বছর আরও ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

জিডিপির অনুপাতে রেমিট্যান্স

  • নেপাল: জিডিপির ৩৩%

  • পাকিস্তান: ৯.৪%

  • বাংলাদেশ: ৬%

  • ভারত: ৩.৫%

২০১০ সালে বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাতে রেমিট্যান্সের অবদান ছিল ৯.৪%। কিন্তু তা কমে ২০২২ সালে দাঁড়ায় ৪.৭%-এ। তবে গত বছর আবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬%-এ।

সামনে করণীয়

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোর আকর্ষণীয় অফার, বৈধ চ্যানেলে প্রতিযোগিতামূলক ডলার রেট এবং হুন্ডির আকর্ষণ কমে যাওয়া রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মূল কারণ।

তবে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেছেন—যাতে অর্থপাচার আবার ফিরে না আসে, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। একইসঙ্গে শ্রমিক পাঠানোর খরচ কমানো ও অবৈধ “ভিসা ট্রেডিং” বন্ধ করা জরুরি।

তার মতে, “যদি একজন শ্রমিককে শুধু ভিসার জন্য ২,৫০০ ডলার দিতে হয়, তবে তা শ্রম রপ্তানি খাতের জন্য বড় ক্ষতি।”

তিনি সরকারকে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে সরকার-টু-সরকার চুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়।

 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশে কম খরচে শ্রমিক পাঠানো গেলে এবং নিম্নআয়ের মানুষ সহজে ঋণ পেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগামী বছরগুলোতেও বাড়তে থাকবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4257 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 08:28:48 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh