বাংলাদেশে প্রকৌশল খাতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো স্নাতক এবং ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলীদের মধ্যে বিরোধ। গতকাল বুধবার, সারা দেশের প্রকৌশলী ছাত্ররা শাহবাগে একত্রিত হয়ে নিজেদের তিনটি দাবি উত্থাপন করেছেন। তাঁদের মূল দাবি ছিল, সরকারি চাকরিতে প্রকৌশলীদের জন্য ডিপ্লোমাধারীদের সংরক্ষিত কোটা বাতিল করা এবং শুধুমাত্র স্নাতক প্রকৌশলীদের জন্য প্রকৌশলী পদবি নির্ধারণ করা।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প খাতে প্রকৌশলীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এই দাবিগুলোর পেছনে কিছু বৈধ যুক্তি রয়েছে। বিশেষত, উন্নত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে, স্নাতক প্রকৌশলীদের বিশেষ অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, যা তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সুতরাং, এই দাবি যথার্থ হতে পারে, তবে এর সমাধান ন্যায়সঙ্গত এবং মানবিক হতে হবে।
এদিকে, ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলীরা তাদের নিজের কাজের ক্ষেত্রকে সম্মানিত করতে এবং প্রকৌশলীদের জন্য উপযুক্ত পদে পদায়ন চাচ্ছেন। এটি মূলত তাদের পেশাগত বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, স্নাতক প্রকৌশলীদেরও একইভাবে তাঁদের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে সুযোগ পাওয়া উচিত। সমন্বিত পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে, উভয় পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
প্রকৌশলীদের পেশাগত স্বীকৃতির বিষয়টি একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সরকারকে প্রকৌশল খাতে মান নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, যেমন পেশাগত প্রশিক্ষণ, রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া চালু করা। এসব পদক্ষেপ প্রকৌশলীদের যোগ্যতা এবং দায়িত্ববোধকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পর্যন্ত, প্রত্যেক প্রকৌশলীরই একটি নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত। এ জন্য তাঁদের জন্য কোর্সের মান, শিক্ষক এবং গবেষণাগারের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, বরং তাঁদের শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানগুলোরও উন্নতি প্রয়োজন।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রকৌশল খাতে ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। প্রকৌশল সংস্থাগুলোতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা অনেক বড়, কিন্তু তাঁরা প্রকৌশলীদের পেশাগত সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন না। তাই, প্রকৌশল প্রশাসন ক্যাডার গঠন করা অত্যন্ত জরুরি, যা পেশাদারিত্ব এবং কর্মক্ষেত্রের মান উন্নত করবে।
এছাড়া, সরকারকে প্রকৌশল খাতে সংশ্লিষ্ট সকল পেশাজীবীদের জন্য নিয়মিত পেশাগত উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তাঁরা সর্বশেষ প্রযুক্তি ও নীতিমালা সম্পর্কে হালনাগাদ থাকেন।