রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তার বাবা মকবুল হোসেন। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে তিনি এ জবানবন্দি দেন।
৮৫ বছর বয়সী মকবুল হোসেন আবেগভরে বলেন,
“সেদিন প্রথমে শুনি আবু সাঈদের গুলি লেগেছে, পরে শুনি সে মারা গেছে। এই খবর শুনে আমার মাথায় আসমান ভেঙে পড়ে।”
এ সময় তিনি আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি জানান, তার ছেলে মেধাবী ছাত্র ছিল, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল, এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাত।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আবু সাঈদ। মকবুল হোসেন বলেন, “রাত সাড়ে তিনটার দিকে লাশ বাড়িতে আসে। প্রশাসন বলে, রাতেই দাফন করতে হবে। আমি বলি, রাতে দাফন সম্ভব নয়। পরদিন সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি। গোসল করানোর সময় দেখি মাথার পেছন থেকে রক্ত ঝরছে আর বুক গুলিতে ঝাঝরা।”
তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ নেতা পোমেল বড়ুয়া পূর্বে তার ছেলেকে মারধর করেছিলেন। পরে পুলিশ সদস্য আমির হোসেন ও সুজন চন্দ্র রায় তাকে গুলি করে হত্যা করে। “আমি মানুষের কাছে বলতাম, জীবিত থাকতে যেন ছেলের চাকরি করতে দেখা যায়। এখন চাই, জীবিত থাকতে যেন ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।”
প্রসিকিউশনের বক্তব্য
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্যে বলেন,
“২০২৪ সালের ১৬ জুলাই আষাঢ়ের শেষ দিনে উত্তরের আকাশে বৃষ্টি ঝরছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিলে নেমে এসেছিল গুলির বৃষ্টি। সেদিন পুলিশ আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালায়। তার বুক ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় ট্যাক্সের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে।”
তিনি আরও বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ। শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার চাই।”
মামলার অগ্রগতি
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত ৬ জনকে আজ কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। তারা হলেন— বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক এএসআই আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এসব অপরাধের বিচার এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।