“গত পাঁচ মাস ধরে আমরা কোনো আমিষ খাইনি। আমার ছোট ছেলের বয়স চার বছর। কিন্তু সে জানেই না ফলমূল আর সবজি দেখতে কিংবা খেতে কেমন।”
হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন গাজা শহরের বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সী রীম তৌফিক খাদার। পাঁচ সন্তানের মা রীম বিবিসিকে জানান, গাজায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণাটা অনেক দেরিতে এসেছে, তবে তবুও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো গাজা উপত্যকার কিছু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। এর পরপরই সেখানকার বাসিন্দারা ভয়াবহ ক্ষুধা ও অপুষ্টির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন।
রীম তৌফিক বলেন, খাবারের অভাব এখন এতটাই তীব্র যে পরিবারগুলো দিনে একবেলা খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য দুধ, সবজি বা ফলমূল পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপুষ্টি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিশুদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
তবে ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। গাজা জুড়ে অঞ্চলে যে অনাহার চলছে, সে কথাও ইসরায়েল অস্বীকার করেছে, যা ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী, একশোর বেশি মানবিক গোষ্ঠী ও জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি বলেছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় “সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট” দুর্ভিক্ষ চলছে।
সংস্থাটি সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এখন “ক্ষুধা, চরম দারিদ্র্য ও মৃত্যুর” মতো “বিপর্যয়কর” পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ছয় সন্তানের মা রাজা তালবেহ ২৫ কেজি ওজন হারিয়েছেন। গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় তার বাড়ি ছিল। কিন্তু এক মাস আগে তিনি তা ছেড়ে চলে এসেছেন। এখন তিনি সমুদ্রের ধারে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকছেন।
তার শরীর গ্লুটেন, মানে শস্য জাতীয় খাবার সহ্য করতে পারে না। তাই বাজারে বা আশেপাশে তার খাওয়ার মতো খাবার খুঁজে পাওয়াটা এখন কঠিন বিষয় হয়ে গেছে।
“যুদ্ধের আগে একটি দাতব্য সংস্থা আমাকে গ্লুটেন-মুক্ত খাবার পেতে সাহায্য করতো। কারণ ওই খাবার কিনে খাওয়া আমার সাধ্যের বাইরে ছিল,” বলেন তিনি।
“যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমার যা দরকার, আমি তা বাজারে পাই না। আর পেলেও কিনতে পারি না। প্রতিদিন বোমাবর্ষণ, বাস্তুচ্যুত জীবন, গরম ও শীত থেকে রক্ষা করতে পারে না এমন এক তাঁবুতে এভাবে থাকা, এর ওপর আবার দুর্ভিক্ষ, এগুলো কি যথেষ্ট নয়?”
২৯ বছরের রিদা হিজেহ জানান, তার পাঁচ বছরের মেয়ে লামিয়ার ওজন ১৯ কেজি থেকে নেমে সাড়ে দশ কেজি হয়ে গেছে। তিনি বলেন যে যুদ্ধের আগে লামিয়ার কোনো রোগ ছিল না।
“সবকিছুই হয়েছে কেবল দুর্ভিক্ষের কারণে,” তিনি বলেন।
“একটি শিশুর খাওয়ার মতো কিছুই নেই। কোনো সবজি নেই, ফল নেই।”
লামিয়া এখন পা ফোলা, চুল পড়া ও স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে।
“সে হাঁটতে পারে না। আমি বহু ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, ক্লিনিক-হাসপাতাল ঘুরেছি। তারা সবাই বলেছে, আমার মেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে। কিন্তু তারা কেউ কিছু দেয়নি। না চিকিৎসা, না কোনো সহায়তা,” তিনি বলেন।