অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ সোমবার কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতি থামাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের জন্মভূমির সাথে তাদের নাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় না। এখন আর কেবল বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না, সময় এসেছে কার্যকর পদক্ষেপের।”
অধ্যাপক ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—
-
দ্রুত, নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের রোডম্যাপ প্রণয়ন
-
আন্তর্জাতিক দাতাদের অব্যাহত সমর্থন ও অর্থায়ন বৃদ্ধি
-
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি
-
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
-
আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা
-
গণহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ
-
আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহিতা ত্বরান্বিত করা
তিনি সতর্ক করে বলেন, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণভাবে মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদের ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, যা কক্সবাজারকে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে পরিণত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, প্রতিবছর রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ৩২ হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে, অথচ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন পাঁচ লাখেরও কম। “এটি প্রমাণ করে, চলমান নিপীড়নের কারণে তারা মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে,” বলেন তিনি।
ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত মিয়ানমার থেকে, সমাধানও সেখানেই নিহিত। সকল পক্ষকে দ্রুততম সময়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে এ সংকটের অবসান ঘটাতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজু। এতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।