গাজার পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত কয়েক মাস ধরে গাজা উপত্যকায় সংঘটিত যুদ্ধ ও মানবিক সংকটের কারণে লাখ লাখ মানুষ জীবনের সংকট মোকাবেলা করছে। বিশেষ করে গাজার শিশুদের জন্য এই মুহূর্তটি একেবারে অন্ধকার সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, এখন গাজা উপত্যকায় “সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ” চলছে।
গাজা শহরের বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সী রীম তৌফিক খাদার জানান, গত পাঁচ মাস ধরে তার পরিবার কোনো ধরনের আমিষ খায়নি। এমনকি তার চার বছর বয়সী ছোট ছেলে কখনো ফল বা সবজি খাওয়ার সুযোগও পায়নি। তিনি বলেন, “আমরা এখন এতটাই ক্ষুধার্ত যে, খাবারের জন্য কষ্ট পাচ্ছি। আমার ছেলে জানেই না ফলমূল আর সবজি কীভাবে দেখতে বা খেতে হয়।”
রীম তৌফিক খাদার আরও জানান, গাজার দুর্ভিক্ষের ঘোষণাটি অনেক দেরিতে এসেছে, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তা অনুযায়ী, গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এখন চরম দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।
গাজার দুর্ভিক্ষ: কি চলছে গাজায়?
জাতিসংঘের “ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন” (আইপিসি) সম্প্রতি জানায় যে, গাজা সিটি এবং আশপাশের এলাকায় “সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট” দুর্ভিক্ষ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গাজার মানুষের শরীরে অপুষ্টির প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া, গাজায় খাদ্য সহায়তার প্রবাহে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল, যদিও ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গাজার জেইতুন এলাকায় বসবাসরত রাজা তালবেহ (২৫) বলেন, “যুদ্ধের আগে আমাকে একটি দাতব্য সংস্থা গ্লুটেন-মুক্ত খাবার দিত, কিন্তু এখন আমি কোনো ধরনের খাদ্যই পাচ্ছি না।” রাজা বলেন, তাকে এখন সমুদ্রের ধারে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকতে হচ্ছে।
শিশুদের অপুষ্টি: জীবন ও মৃত্যুর সংগ্রাম
রিদা হিজেহ, ২৯, গাজার বাসিন্দা, তার পাঁচ বছরের মেয়ে লামিয়ার অবস্থা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, তার মেয়ে লামিয়ার ওজন এক সময় ১৯ কেজি ছিল, কিন্তু এখন তা কমে সাড়ে ১০ কেজি হয়ে গেছে। রিদা বলেন, “মেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে, তার পা ফোলা, চুল পড়ছে, এবং এখন সে হাঁটতেও পারে না।” তবে, তিনি বলেন, গাজার হাসপাতালে বা ক্লিনিকে তার মেয়ে চিকিৎসা পাচ্ছে না।
এছাড়া, গাজার অনেক মা-বাবা বলছেন যে তারা তাদের সন্তানদের জন্য কোনো ধরনের খাদ্য বা চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন না। বিভিন্ন মানবিক সংস্থাগুলি গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং সাহায্য পাঠানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা: একান্ত প্রয়োজন
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় সহায়তার প্রবাহ বাড়ানো জরুরি। খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ এবং ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হলে, অনেক জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, লাখ লাখ মানুষকে দ্রুত সাহায্য প্রয়োজন।
গাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত গাজায় ত্রাণ পাঠানো এবং মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা। এই সংকটের সমাধান না হলে, গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।