• হোম > বিদেশ > আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

  • বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪৭
  • ৫০

---

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর চার কর্মকর্তার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। আমেরিকান ও ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে করা মামলায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আইসিসি একে একটি নিরপেক্ষ বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার ওপর “সুস্পষ্ট আক্রমণ” হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২০ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, আইসিসির দুই বিচারক এবং দুই আইনজীবীকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, তার সঙ্গে এই কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল।

নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও আইসিসি। তবে ওয়াশিংটনকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত এই আদালত বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগেও আইসিসির সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানসহ আরও কয়েকজন বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

নতুন করে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন—

  • কানাডার বিচারক কিম্বারলি প্রোস্ট,

  • ফ্রান্সের বিচারক নিকোলা গিলু,

  • ফিজির আইনজীবী নাজহাত শামিম খান,

  • সেনেগালের আইনজীবী মামে মানদিয়ায়ে নিয়াং।

মার্কিন দাবি অনুযায়ী, এ চারজন সরাসরি যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নাগরিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত, গ্রেপ্তার, আটক কিংবা বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে।

মার্কিন যুক্তির পেছনে কারণ

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুমোদনের রায়ে অংশ নেওয়ার কারণে বিচারক কিম্বারলি প্রোস্টকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, যদিও পরে সেই তদন্ত বাতিল হয়।
অন্যদিকে, গাজায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার অনুমোদনের জন্য বিচারক নিকোলা গিলুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের তদন্ত চালিয়ে যাওয়া এবং আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখার কারণে আইনজীবী নাজহাত শামিম খান ও মামে নিয়াংকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

আইসিসি ও জাতিসংঘের অবস্থান

এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ কেবল আদালতের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং লাখ লাখ নিরপরাধ ভুক্তভোগীর প্রতি চরম অবমাননা। আদালত মনে করে, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেছেন, আইসিসির ওপর একের পর এক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি আরও জানান, তাদের কাজের জন্য আইসিসি জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, শক্তিধর দেশগুলো যদি আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যক্রমকে এভাবে উপেক্ষা করে, তাহলে বিশ্বে ন্যায়বিচারের প্রয়াস বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়বে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4039 ,   Print Date & Time: Sunday, 12 October 2025, 04:24:57 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh