• হোম > বিদেশ > বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক আর নেই

বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক আর নেই

  • বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৭:০০
  • ৭০

---

বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা জনপ্রিয় মার্কিন বিচারক ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও আর নেই। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে গত বুধবার (২০ আগস্ট) ৮৮ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে মৃত্যুর খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও শুধু একজন বিচারকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তার কোমল হৃদয়, রসবোধ, এবং সহমর্মী দৃষ্টিভঙ্গি আদালতের কাঠগড়াকে সাধারণ মানুষের জন্য করে তুলেছিল এক আশ্রয়স্থল। বিবৃতিতে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মানুষের প্রতি সহানুভূতি, বিনয় এবং মানবিকতায় বিশ্বাসের কারণে তিনি আদালতের ভেতরে ও বাইরে কোটি মানুষের জীবন স্পর্শ করেছেন। যারা তাকে চিনতেন, তাদের সবার হৃদয়ে তার স্মৃতি অমলিন হয়ে থাকবে।

টিভি থেকে বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তা

প্রভিডেন্স শহরের স্থানীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে দর্শকরা প্রথম তাকে দেখেন ট্রাফিক ও পৌর আইনভঙ্গ সংক্রান্ত মামলার বিচার করতে। সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প শুনে সহানুভূতি দেখানোর তার ভঙ্গিমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে লায়নসগেটের ডেবমার-মারকারি বিভাগ অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সম্প্রচার শুরু করে।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কট ইন প্রভিডেন্স’ দুই মৌসুম সম্প্রচারিত হয়। প্রভিডেন্সের গায়িকা পাওলা আবদুল এই অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেন। অনুষ্ঠানটি ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে ডে-টাইম এমি অ্যাওয়ার্ড-এ মনোনয়ন পায়। বিচার প্রক্রিয়ায় তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাধারণ জ্ঞানের অনন্য মিশ্রণ দর্শকের ভালোবাসা কুড়ায়।

ডেবমার-মারকারির সহসভাপতি মর্ট মার্কাস ও আইরা বার্নস্টাইন এক বিবৃতিতে বলেন, “তার সহানুভূতি বিচারকক্ষ ছাড়িয়ে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি আমাদের গভীরভাবে মিস করবেন।”

‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’

ফ্রান্সেসকো ক্যাপ্রিও ১৯৩৬ সালের ২৪ নভেম্বর প্রভিডেন্সে এক অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ফল বিক্রেতা এক সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি নিজের দৃঢ়তা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে গড়ে তোলেন অসাধারণ জীবন।

১৯৫৮ সালে প্রভিডেন্স কলেজ থেকে স্নাতক শেষে শিক্ষকতা করতে করতে রাতের ক্লাসে আইন পড়েন। পরে বোস্টনের সাফোক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ল’ থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রভিডেন্স মিউনিসিপাল কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধান বিচারক ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি পরিচিত হন ‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ হিসেবে।

জনপ্রিয়তা ও শেষ প্রার্থনা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। ফেসবুকে তার অনুসারী ছিল ৩৪ লাখ, ইনস্টাগ্রামে ৩৩ লাখ এবং টিকটকে ১৬ লাখ। মৃত্যুর মাত্র একদিন আগেও হাসপাতালের শয্যা থেকে তিনি ভক্তদের উদ্দেশে শেষবারের মতো লিখেছিলেন—
“আমাকে প্রার্থনায় মনে রাখবেন।”

রোড আইল্যান্ডের গভর্নর ড্যান ম্যাকি এক্সে (টুইটার) তাকে ‘রোড আইল্যান্ডের গর্ব’ উল্লেখ করে তার সম্মানে অঙ্গরাজ্যের পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।

তার ছেলে ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও জুনিয়র বলেন, “আমার বাবা সারাজীবন দানশীল ছিলেন। অন্যকে সাহায্য করাই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। তার সহানুভূতি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা যদি ভালো কাজ চালিয়ে যাই, তবে তার উত্তরাধিকার বেঁচে থাকবে।”

ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিওর মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ শোকাহত। তিনি শুধু একজন বিচারকই নন, বরং মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের এমন এক প্রতীক, যার আলো অনেককে পথ দেখাতে থাকবে আগামী দিনগুলোতেও।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/4029 ,   Print Date & Time: Sunday, 12 October 2025, 01:09:13 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh