• হোম > বাংলাদেশ > জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৪১৮, আহত ৮৫৬

জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৪১৮, আহত ৮৫৬

  • মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫৯
  • ৪৪

---

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই যেন অস্বাভাবিক এক স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৮ জনের প্রাণহানি ও ৮৫৬ জন আহত হওয়ার পরিসংখ্যান আবারও সেই ভয়াবহ বাস্তবতাই সামনে এনেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়—১০৯ জন, যা মোট নিহতের ২৬ শতাংশেরও বেশি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায়।


নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু

জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নারী ছিলেন ৭২ জন (১৭.২২ শতাংশ) এবং শিশু ৫৩ জন (১২.৬৭ শতাংশ)। প্রতিটি সংখ্যার পেছনে একটি ভেঙে যাওয়া পরিবার, হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন ও বেদনাহত সমাজ—যা শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানবিক বিপর্যয়ও বটে।


মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সবচেয়ে ভয়াবহ

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই মাসে ১৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন ১০৯ জন, যা মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। এ ছাড়া—

  • পথচারী নিহত হয়েছেন ৯২ জন (২২ শতাংশ)

  • চালক ও সহকারী ৫৬ জন (১৩.৪০ শতাংশ)

  • নৌ–দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জন

  • রেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ জন

যানবাহনভিত্তিক নিহতদের চিত্র

  • মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী: ১০৯ জন

  • বাসযাত্রী: ৪১ জন (৯.৮০ শতাংশ)

  • ট্রাক–পিকআপ আরোহী: ৩০ জন (৭.১৭ শতাংশ)

  • প্রাইভেটকার–মাইক্রোবাস–অ্যাম্বুলেন্স আরোহী: ২০ জন (৪.৭৮ শতাংশ)

  • থ্রি–হুইলার যাত্রী (সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান): ১০৮ জন (২৫.৮৪ শতাংশ)

  • স্থানীয় যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র ইত্যাদি): ১২ জন (২.৮৭ শতাংশ)

  • বাইসাইকেল–রিকশা আরোহী: ৬ জন (১.৪৪ শতাংশ)

দুর্ঘটনার সময়

দিনভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়—

  • ভোরে: ৪.৯৬%

  • সকালে: ২৯.৫৭%

  • দুপুরে: ২১.৮৯%

  • বিকালে: ১৭.১৫%

  • সন্ধ্যায়: ১১.০৬%

  • রাতে: ১৫.৩৪%


দুর্ঘটনার ভৌগোলিক চিত্র

সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে (২৬.৪১ শতাংশ)। জুলাই মাসে শুধু ঢাকা বিভাগেই ১১৭টি দুর্ঘটনায় ১০৫ জন প্রাণ হারান।
এককভাবে ঢাকা জেলায় ৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় ২৬টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জন, আহত ৩৮ জন।
সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ বিভাগে (৭.২২ শতাংশ)।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন
২. ত্রুটিপূর্ণ সড়ক
৩. বেপরোয়া গতি
৪. চালকদের মানসিকতা ও অদক্ষতা
৫. বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা
৬. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল
৭. তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো
৮. জনসাধারণের ট্রাফিক আইন না মানা
৯. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
১০. বিআরটিএ-র সীমিত সক্ষমতা

১১. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি

দুর্ঘটনা কমাতে সুপারিশ

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা রোধে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে সেগুলো হলো—

  • দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি

  • চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্টকরণ

  • বিআরটিএ-র সক্ষমতা বৃদ্ধি

  • পরিবহন খাতে আইন প্রয়োগ জোরদার

  • মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা সার্ভিস রোড

  • ধাপে ধাপে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ

  • গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা

  • সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন

  • রেল ও নৌ–পথের উন্নয়নের মাধ্যমে সড়কের চাপ কমানো

  • টেকসই পরিবহন কৌশল বাস্তবায়ন


উপসংহার

প্রতিদিনের এই দুর্ঘটনা শুধু সংখ্যার খেলা নয়—প্রতিটি মৃত্যু একটি পরিবারকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। মানুষের জীবন যেন অবহেলায় ঝরে না যায়, সেটিই হওয়া উচিত রাষ্ট্র ও সমাজের অঙ্গীকার।

 


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3943 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 04:42:13 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh